তামিম ইকবালের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে খুলনা টাইটান্সের দেয়া ১৩২ রানের লক্ষ্যটা পাঁচ উইকেট ও আট বল হাতে রেখে টপকে গেছে চিটাগং ভাইকিংস। ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংস উপহার দেন তামিম। টানা পঞ্চম জয়ে খুলনাকে হটিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠে এসেছে চিটাগং।
টুর্নামেন্টের প্রথম দেখায় নাটকীয় হারের প্রতিশোধটাও সেরে নিল চিটাগং। গত ১২ নভেম্বরের ম্যাচটিতে চার রানের জয় পেয়েছিল খুলনা। ১২৮ রানের লক্ষ্যে শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ৬। হাতে চার উইকেট। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মাত্র এক রান দিয়েই তিনটি উইকেট নিয়ে নায়কের আসনে বসেছিলেন।
বিপিএলের এবারের আসরে চতুর্থ ফিফটি উদযাপন করেন দেশসেরা ওপেনার তামিম। তাতে ছিল ৮টি চার ও ১টি ছক্কার মার। শেষদিকে, তামিমের সঙ্গে ঝড়ো ইনিংস খেলে মাঠ ছাড়েন মোহাম্মদ নবী। ৮ বলে দুই চার ও এক ছক্কায় ১৭ রান আসে আফগান অলরাউন্ডারের ব্যাট থেকে।
ওপেনিং জুটিতে ৩৯ রান (৪.১ ওভার) তুলে চিটাগংকে দুর্দান্ত শুরু এনে দেন তামিম ও ক্রিস গেইল। ১১ বলে ১৯ রান করে ফেরেন ক্যারিবীয় ‘ব্যাটিং দানব’। তাকে জুনাইদ খানের তালুবন্দি করেন অফস্পিনার শুভাগত হোম।
সপ্তম ওভারে আনামুল হক (৩) ও নবম ওভারে শোয়েব মালিক (১) রানআউটের ফাঁদে পড়েন। দলীয় ৫৪ রানে তিন উইকেট হারিয়ে ব্যাকফুটে চলে যায় চিটাগং। ১১তম ওভারে মোশাররফ হোসেন রুবেলকে ডাউন দ্য উইকেটে খেলতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হন জাকির হাসান (৩)।
জহুরুল ইসলামকে নিয়ে পঞ্চম উইকেট জুটিতে ৩৭ রান যোগ করে জয়ের ভিত গড়ে দেন তামিম। কেভন কুপারের করা ১৬তম ওভারের শেষ বলে দলীয় ১০১ রানে মাহমুদউল্লাহর দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন জহুরুল (২২)।
এর আগে তাসকিন-নবী-ইমরান-সাকলাইনদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু থেকেই চাপের মধ্যে ছিল টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনা। নির্ধারিত ওভার শেষে তাদের সংগ্রহ দাঁড়ায় আট উইকেটে ১৩১। সর্বোচ্চ ৪২ রান আসে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে।
দুই পেসার তাসকিন আহমেদ ও ইমরান খান দু’টি করে উইকেট লাভ করেন। একটি করে নেন মোহাম্মদ নবী, শুভাশিষ রায় ও সাকলাইন সজিব।
প্রথম ওভারেই ব্রেকথ্রু এনে দেন নবী। তাইবুর রহমানকে (১) ক্লিন বোল্ড করেন আফগান অলরাউন্ডার। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই অলক কাপালির (৩) স্ট্যাম্প ভাঙেন বাঁহাতি স্পিনার সাকলাইন। পরের ওভারে শুভাগত হোমকে (২) বাউন্ডারি লাইনে শোয়েব মালিকের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত করেন পেসার শুভাশিষ।
পাওয়ার প্লে’র শেষ ওভারে ওপেনার রিকি ওয়েসেলসের (২০) উইকেট হারিয়ে কঠিন চাপের মুখেই পড়ে খুলনা। আরেক পেসার ইমরানের বলে প্রথমে ক্যাচ হাতছাড়া করলেও মাটিতে পড়ার আগমুহূর্তে বল তালুবন্দি করেন ক্রিস গেইল।
পঞ্চম উইকেট জুটিতে দলকে টেনে তোলেন মাহমুদউল্লাহ ও আরিফুল। ১৪তম ওভারে দুর্ভাগ্যজনকভাবে দু’জনের ৪৪ রানের পার্টনারশিপ ভাঙে। সিঙ্গেল নিতে গিয়ে বোলার ইমরানের থ্রোতে রানআউটের শিকার হন অারিফুল (১৮)।
পরের ওভারেই তাসকিনের বলে জাকির হাসানের ক্যাচবন্দি হওয়ার আগে ৪২ রানের (৩৯ বল) ইনিংস উপহার দেন মাহমুদউল্লাহ। তাতে ছিল ৪টি চার ও ১টি ছক্কার মার।
সপ্তম উইকেটে ৩২ রান যোগ করেন দুই ক্যারিবিয়ান নিকোলাস পুরান ও কেভন কুপার। ১৯তম ওভারে কুপারকে (১৫) আনামুল হকের গ্লাভসবন্দি করেন ইমরান। তাসকিসের করা ইনিংসের শেষ বলে মালিকের হাতে ধরা পড়েন পুরান (১৮)।
এদিকে, মঙ্গলবারের (২৯ নভেম্বর) প্রথম ম্যাচে মুশফিকের বরিশাল বুলসকে আট উইকেটে হারিয়েছে মাশরাফির কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স। এবারের আসরে ধুঁকতে থাকা ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেল।
সাত দলের পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় স্থানে নাম লেখানো চিটাগংয়ের সংগ্রহ ১০ ম্যাচে ছয় জয় ও চার হারে ১২। রেটে পিছিয়ে থাকায় সমান ম্যাচে সমান পয়েন্টে তিনে নেমে গেছে খুলনা। ৯ ম্যাচ শেষে ১২ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে সাকিবের ঢাকা ডায়নামাইটস। দুই পয়েন্ট পিছিয়ে যথাক্রমে চারে রাজশাহী কিংস ও পাঁচ নম্বরে রংপুর রাইডার্স। মাত্র দুই জয়ে তলানিতে কুমিল্লা আর এক ম্যাচ বেশি খেলা বরিশাল (১০টি) ছয় পয়েন্টে ছয়ে অবস্থান করছে।