যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কূটনীতিক আটকের ঘটনায় চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। গতকাল ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা চাওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়। গত সোমবার নিউইয়র্কে বাংলাদেশের ডেপুটি কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ সাহেদুল ইসলামকে তার পলাতক এক গৃহকর্মীর মামলায় নিউইয়র্ক পুলিশ গ্রেফতার করে। তাকে কুইন্স ক্রিমিনাল কোর্টে রাখা হয়। তার বিরুদ্ধে তিন বছরের বেশি সময় ধরে গৃহকর্মীর ওপর সহিংস নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য করানোর অভিযোগ আনা হয়। বাংলাদেশ সময় গতকাল রাতে বেলবন্ড দাখিল সাপেক্ষে তাকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হবে বলে গতকাল বিকেলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, একজন পলাতক ব্যক্তির কথায় একজন কূটনীতিককে কেন আটক করা হয়েছে, সেটি জানার জন্য আমরা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে এনে কারণ জানতে চেয়েছি। যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত জোয়েল রিফম্যান ও পলিটিক্যাল কাউন্সিলর আন্দ্রেয়া বি রডরিগেজ গতকাল ভারপ্রাপ্ত পররাষ্ট্র সচিব মাহবুব উজ জামানের সঙ্গে দেখা করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ওই গৃহকর্মী প্রায় ১৩ মাস আগে সাহেদুল ইসলামের বাড়ি থেকে পালিয়ে যায়। সে সময় তিনি বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছিলেন। এরপর হঠাত্ করেই তাকে (সাহেদুল) আটকের খবর পাওয়া গেল। পুরো ব্যাপারটি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়। কূটনীতিক আটকের ঘটনায় বাংলাদেশ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বলেও জানান তিনি। গত সোমবার সকালে নিউইয়র্কের পুলিশ সাহেদুল ইসলামকে নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করার কয়েক ঘণ্টা পর তাকে কুইন্স সুপ্রিমকোর্টে হাজির করা হয়। বিচারক ড্যানিয়েল লুইস ৫০ হাজার ডলারের বন্ড বা নগদ ২৫ হাজার ডলারে তার জামিন ঠিক করে দেন এবং তার পাসপোর্ট জব্দ করার নির্দেশ দেন বলে কুইন্স ডিস্ট্রিক্ট অ্যাটর্নি রিচার্ড ব্রাউন জানান। অ্যাটর্নি ব্রাউন একটি বার্তা সংস্থাকে জানান, সাহেদুলের বিরুদ্ধে এক বিদেশিকে এনে তার কুইন্সের বাসায় রেখে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের মে মাস পর্যন্ত বিনা মজুরিতে জোর করে কাজ করানোর ঘটনায় শ্রম পাচার ও নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে। কূটনৈতিক কর্মকর্তা হলেও সম্পূর্ণ কূটনৈতিক দায়মুক্তির অধিকারী না হওয়ায় তিনি গ্রেফতার এড়াতে পারেননি। ব্রাউন বলেন, ২০১২ সালের শেষ দিকে সাহেদুল বাংলাদেশ থেকে মোহাম্মদ আমিন নামে একজনকে গৃহকর্মী হিসেবে নিউইয়র্কে এনে তার পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জব্দ করেন। তাকে দিয়ে দৈনিক ১৮ ঘণ্টা কাজ করালেও বিনিময়ে একটি পয়সাও দেওয়া হয়নি। মজুরি দাবি করলেই আমিনকে মারধর করা হতো। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে কাজ ছেড়ে দেওয়ার কথা বললে আমিনকে হত্যার হুমকি-এমনকি বাংলাদেশে তার বৃদ্ধা মা ও ছেলেমেয়েকেও হত্যার হুমকি দেন। নির্যাতনে অতিষ্ঠ হয়ে গত বছরের মে মাসে আমিন পালিয়ে পুলিশের কাছে গিয়ে ঘটনার বিবরণ দিয়ে বিচার চান। বিচারে সাহেদুল দোষী সাব্যস্ত হলে তাকে সর্বোচ্চ ১৫ বছরের কারাদণ্ড ও প্রায় চার বছরের ওভারটাইমসহ বেতন ও যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করতে হবে। জামিন পেলে মামলার শুনানির জন্য আগামী ২৮ জুন সাহেদুলকে আবার আদালতে হাজির হতে বলবে বলে জানান অ্যাটর্নি ব্রাউন। নিউইয়র্কে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল শামীম আহসান বলেন, আমিন গত বছর বাসা থেকে নিখোঁজ হওয়ার পর আমরা প্রচলিত রীতি অনুযায়ী স্টেট ডিপার্টমেন্টকে ঘটনা অবহিত করি। গৃহকর্মী নিয়োগ থেকে পারিশ্রমিক-ভাতা ও ভ্রমণভাতার সবকিছুই ডেপুটি কনসাল জেনারেলের ব্যক্তিগতভাবে করার কথা। তাই বেতন একেবারেই পাননি বলে যে অভিযোগ করা হয়েছে, সেটি সত্য না মিথ্যা তা আমি বলতে পারব না। তা নিতান্তই সাহেদুলের ব্যাপার। প্রচলিত রীতি অনুযায়ী সাহেদুলের পাশে থাকবেন বলে জানান কনসাল জেনারেল। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. নাজমুল ইসলাম গতকাল সকালের খবরকে বলেন, সাহেদুলের গৃহপরিচালক কাজ ছেড়ে চলে গেছে মর্মে যুক্তরাষ্ট্রের কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছিল। তারপরও সাহেদুলের বিরুদ্ধে দেশটির কর্তৃপক্ষ কেন ব্যবস্থা নিল, তা জানতে ওয়াশিংটন দূতাবাসের মাধ্যমে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে যোগাযোগ করা হবে। একই ধরনের অভিযোগে এর আগে ২০১৪ সালের মার্চ মাসে নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ওই মামলার নোটিস দেওয়ার পর্যায়েই সে নিউইয়র্ক ছাড়ে। মামলাটি এখনও ঝুলে থাকলেও তার গৃহকর্মী মাসুদ পারভেজ গ্রিন কার্ড পেয়েছে।