বগুড়ায় ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান সরকারসহ আটক ৪ জনকে আদালতে নেয়া হয়েছে। আদালতে তাদের বিরুদ্ধে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করেছে পুলিশ। রোববার (৩০ জুলাই) দুপুরে এ রিমাণ্ড আবেদন করা হয়। এ ঘটনায় দোষীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কখা বলেছেন লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। শনিবার (২৯ জুলাই) বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়া শহরের বাদুরতলায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির প্রলোভন দিয়ে এক ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয়েছে। এ ঘটনার বিচারের নামে স্থানীয় নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকি ও তার সহযোগীরা ওই তরুণী ও তার মাকে ধরে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়ে চুল কেটে ন্যাড়া করে দেয়। ধর্ষণের শিকার ওই তরুণী বর্তমানে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তরুণীর মা মুন্নি বেগম বাদী হয়ে অপহরণ, ধর্ষণ ও মারপিটের অভিযোগে সদর থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকায় পুলিশ শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক তুফান সরকারকে তার তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করেছে। পুলিশ জানায়, মেয়েটি বগুড়া জুবলী স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে। তুফান সরকার তাকে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করত। ভালো কোনো কলেজে ভর্তি করে দেওয়ার নাম করে সে মেয়েটির কাগজপত্র নেয়। গত ১৭ জুলাই মেয়েটিকে তার বাড়িতে কৌশলে ডেকে নিয়ে ধর্ষণ করে। তুফান সরকারের স্ত্রী ওই সময় বাড়িতে ছিল না। নির্যাতনকারীদের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শুক্রবার রাতে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। এরপরই বিষয়টি জানাজানি হলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ধর্ষণের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শহরের চকসূত্রাপুর কসাইপাড়ার মজিবর রহমানের ছেলে এলাকায় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত তুফান সরকারকে (৩০) তার তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত তুফান শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক। তবে পৌরসভার সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ অপর অভিযুক্তদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। গ্রেফতারকৃত অন্য তিনজন হল-তুফান সরকারের সহযোগী আলী আজম দিপু (২৫), আতিক (২৭) ও রুপম (২৫)। পুলিশ জানিয়েছে, এ ঘটনায় অপহরণ, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে ধর্ষকসহ তার স্ত্রী আশা, মহিলা কাউন্সিলর রুমকি ও তুফানের গাড়িচালকসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নারী কাউন্সিলরসহ জড়িত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। অভিযোগ করা হয়েছে, বাড়িতে যাওয়া-আসার পথে ওই তরুণীকে প্রায়ই রাস্তায় উত্ত্যক্ত করত তুফান ও তার সহযোগীরা। কিছু দিন আগে তরুণীটির পথরোধ করে তুফানের সহযোগীরা তার মোবাইল ফোন নম্বর নেয়। তরুণীটি তার মোবাইল ফোন নম্বর না দিয়ে ভুল নম্বর দিলে তুফান তরুণীটির আসল ফোন নম্বর সংগ্রহ করে হুমকি দেয়। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে ভালো কলেজে ভর্তি করার প্রলোভন দেয়। তরুণীটি কলেজে ভর্তির জন্য কাগজপত্রসহ ৪ হাজার টাকা তুফানের সহযোগীর হাতে দেয়। ১৭ জুলাই ওই তরুণীকে কলেজের ভর্তির কাগজপত্রে সই করার জন্য তুফান সরকার বাড়িতে ডেকে পাঠায়। ভালো কলেজে ভর্তির প্রলোভনে পড়ে তরুণীটি তুফান সরকারের চকসূত্রাপুর কসাইপাড়ার বাড়িতে যায়। গাড়িতে করে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই সময় বাড়িতে তুফানের স্ত্রী আশা ছিল না। এ সময় তুফান তাকে ধর্ষণ করে বলে পুলিশের কাছে তরুণীটি স্বীকারোক্তি দিয়েছে। ধর্ষণের কারণে তরুণীটি অসুস্থ হয়ে পড়লে তুফানের এক সহযোগী তাকে গর্ভনিরোধক ওষুধ এনে দেয়। ধর্ষণের ঘটনাটি তরুণীটি ভয়ে তার মাকে পর্যন্ত জানাতে পারেনি। পরবর্তীতে তুফান তার সঙ্গে যোগাযোগ রাখে এবং বিষয়টি জানতে পেরে তুফানের স্ত্রী ক্ষিপ্ত হয়। এ ঘটনার জের ধরে তুফানের স্ত্রী আশা ও বড় বোন নারী কাউন্সিলর (৪, ৫ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ড) মার্জিয়া হাসান রুমকিসহ তাদের লোকজন তরুণীর বাড়িতে তালা লাগিয়ে দেয়। পরে তরুণী ও তার মাকে কাউন্সিলরের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। সেখানে মেয়েটিকে অপবাদ দিয়ে চালানো হয় অমানুষিক ও বর্বর নির্যাতন। এক পর্যায়ে দুজনের মাথার চুল কেটে ফেলা হয়। মারপিটের পর নাপিত ডেকে এনে মাথা ন্যাড়া করে দিয়ে কয়েক ঘণ্টা আটকে রাখার পর ২০ মিনিট সময় দিয়ে শহর ছাড়ার নির্দেশ দেয় নির্যাতনকারীরা। এমনকি বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার জন্য নির্যাতনকারীরা ওই তরুণীর বাড়িতে ট্রাক পাঠায় বলে জানা যায়। ওই তরুণীর পিতা আতাইকুলা এলাকায় একটি ছোট খাবারের দোকান চালান। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়া তরুণীকে শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পুলিশ রাত সাড়ে ১০টার দিকে বিষয়টি জানতে পেরে অভিযান শুরু করে এবং রাতে তুফানসহ চারজনকে আটক করে। গতকাল দুপুরে সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়। নির্যাতিত তরুণী ও তার মায়ের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। বগুড়া সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সনাতন চক্রবর্তী জানান, আটক ধর্ষক ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে। তরুণীর ওপর নির্যাতন চালানো অভিযুক্ত অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।