বেতন-ভাতা নিয়ে বোর্ডের সঙ্গে দেন-দরবারেই চলে গেল অনেকটা সময়। ব্যাট-বল হাতে নেওয়ার সময়ই তো নেই অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারদের! তবে ঝামেলা মিটে যাওয়ার পর যখন বাংলাদেশ সফরে আসা নিশ্চিত হলো, আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন স্টিভেন স্মিথরা। ডারউইনে চলছে ‘বাংলাদেশের কন্ডিশনে’ প্রস্তুতি। কোচ ড্যারেন লেম্যানও আশাবাদী, দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে আসার আগে পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে তাঁর দল। এরই মধ্যে ভাবতে শুরু করেছেন রণকৌশল নিয়েও। খেলোয়াড়দের কাছে তাঁর চাওয়া, দুটি টেস্টেরই প্রথম ইনিংসে ৪৫০ ছাড়ানো রান!
এ বছর ফেব্রুয়ারি-মার্চে ভারত সফরের আগেও প্রায় একই রকম কথা বলেছিলেন লেম্যান ও স্মিথ। তবে চার টেস্টের সিরিজে মাত্র একবারই অস্ট্রেলিয়া ৪৫০ ছাড়ানো রান করেছিল—রাঁচিতে ড্র হওয়া তৃতীয় টেস্টে। অস্ট্রেলিয়ার বিশ্লেষণ, বাংলাদেশের উইকেট ভারতের চেয়েও মন্থর এবং বল আরও নিচু হয়ে আসে। আর উপমহাদেশের এই কন্ডিশনে সময়ের সঙ্গে আরও স্পিন-বান্ধব হয়ে ওঠে উইকেট। ব্যাট করা তখন আরও কঠিন হয়ে যায়। সব মিলিয়ে এখানে প্রথম ইনিংসে বড় রান করার বিকল্প দেখছেন না লেম্যান, ‘ভারত সফরেই আমাদের এই অভিজ্ঞতা হয়েছে। ৩৫০-এর বদলে আপনাকে ৪৫০ রান করতে হবে এবং দীর্ঘ সময় ব্যাট করতে হবে। প্রথম ইনিংসের রানটাই গুরুত্বপূর্ণ। আর আমাদের ওই রানটা এনে দেওয়াই হবে ব্যাটসম্যানদের কাজ।’
বাংলাদেশের মাটিতে সাম্প্রতিক টেস্টগুলো অবশ্য খুব একটা আশা দেখাচ্ছে না লেম্যানকে। বাংলাদেশে সর্বশেষ ইংল্যান্ড গত বছরের শেষ দিকে দুই টেস্টের চার ইনিংসে একবারও ৩০০ রানই করতে পারেনি! ওই সিরিজের ফল ১-১। এর আগে ভারত (একমাত্র টেস্ট) ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও টেস্ট সিরিজ ড্র করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ থেকে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জিতে ফিরেছে পাকিস্তান। ২০১৫ সালের ওই সিরিজে দুটি টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাকিস্তান রান করেছিল ৬২৮ ও ৫৫৭/৮। প্রথম ইনিংসে বড় রান করার কথাটা তো আর এমনি এমনি বলেননি লেম্যান!
অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানরা কি পারবেন কোচের চাওয়া পূরণ করতে? লেম্যান সবচেয়ে বেশি যাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবেন, ডেভিড ওয়ার্নার তাঁদের একজন। দলের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৪৭.৪২, এশিয়ার মাটিতে সেটাই ৩০.৩৮। কোচ তবু আশাবাদী তাঁর ওপেনারকে নিয়ে, ‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত, ও উপমহাদেশে তার (বাজে) ফর্ম কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াবে। সে ভারতে ভালো শুরু পেয়েছিল, কিন্তু ইনিংসগুলো লম্বা করতে পারেনি। এবার যদি সেটা করতে পারে, বাংলাদেশে আমাদের ভালো একটা সিরিজ কাটবে।’
তবে কাজটা যে সহজ নয়, সেটি মনে করিয়ে দিয়েছেন সর্বকালের অন্যতম সেরা উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। এর আগে একবারই অস্ট্রেলিয়া টেস্ট সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশে, ২০০৬ সালে। ফতুল্লায় প্রথম টেস্টে রিকি পন্টিংয়ের দল প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ৪২৭ রানের জবাব দিতে নেমে ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল ৯৩ রানে! এরপরই ২১২ বলে ১৪৪ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলেছিলেন গিলক্রিস্ট। অস্ট্রেলিয়ান একটি রেডিওর সঙ্গে সাক্ষাৎকারে গিলক্রিস্ট বলেছেন, ‘সেবার বাংলাদেশে যাওয়ার আগে দুই টেস্টের সিরিজটা নিয়ে আমাদের ভাবনা ছিল—যাব, ওদের গুঁড়িয়ে দিয়ে চলে আসব। কিন্তু ওরা এমনভাবে আমাদের আক্রমণ করল...আমি যখন ব্যাট করতে নামি, দল ছিল আতঙ্কে।’
বৈরী এই কন্ডিশনের চ্যালেঞ্জ তো থাকছেই। তার ওপর প্রায় আড়াই মাস একেবারে ক্রিকেটের বাইরে অস্ট্রেলিয়ান খেলোয়াড়েরা। এটা কি বাধা হয়ে দাঁড়াবে অস্ট্রেলিয়ানদের জন্য? লেম্যান অবশ্য ব্যাপারটা দেখছেন অন্যভাবে, ‘সমঝোতা স্মারক নিয়ে ঝামেলার মধ্যেও কিন্তু ছেলেরা রাজ্য দলের হয়ে অনুশীলন করেছে। ম্যাচ হয়তো খেলা হয়নি। কিন্তু ফিটনেসের কথা বললে তারা এগিয়েই আছে। আর ওদের অনেকের জন্য এই বিরতিটা দরকার ছিল। ওরা একটা লম্বা গ্রীষ্মের সামনে দাঁড়িয়ে এবং সামনে ঠাসা সূচি। এ রকম অবস্থায় মনটা ফুরফুরে থাকা ভালো।’ তথ্যসূত্র: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, সিডনি মর্নিং হেরাল্ড।