খুলনায় শামসুন নাহার চাদনী (১২) নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত শুক্রবার দিবাগত রাতে নগরীর হরিণটানা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে নিজ বাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় গতকাল শনিবার লবণচরা থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন নিহত স্কুল ছাত্রীর বাবা সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সার্জেন্ট রবিউল ইসলাম।
ওই মামলায় স্থানীয় পাইপ মিস্ত্রি শুভ ও তাঁর বাবা শাহ আলমসহ চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছে, বাসা থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি ও উত্ত্যক্তের হাত থেকে বাঁচতেই চাদনী আত্মহত্যা করেছে।
এলাকাবাসী ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হরিণটানা প্রাইমারি স্কুলের সামনে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন চাদনী। চাদনী স্কুলে যাওয়া-আসার সময় তাঁকে প্রতিবেশী পাইপ মিস্ত্রি শুভ সহযোগীদের নিয়ে উত্ত্যক্ত করতেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকেলে সাত-আটজন সহযোগী নিয়ে শুভ চাদনীদের বাসায় যান। চাদনীর বাবার সঙ্গে তাঁদের বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে চাদনীর বাবাবে মারধর করেন শুভ। এ সময় চাদনীকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়ে চলে যান তাঁরা। পরে রাত ৮টারদিকে শুভ সহযোগীতের নিয়ে আবার চাদনীদের বাসা যান। তাঁদের বাসার দরজা বন্ধ পেয়ে খুলে দিতে বলেন। তখন চাদনীর বাসার কেউ দরজা খুলে দেননি। এ ঘটনার পর রাত ১০টারদিকে চাঁদনী ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর পেয়ে দিবাগত রাত ১টার দিকে পুলিশ চাদনীর লাশ উদ্ধার করে।
চাদনীর প্রতিবেশী এমদাদুল হক ও ওমর আলী জানান, গত এক সপ্তাহ আগে উত্ত্যক্তের বিষয়টি জানার পর চাদনীর বাবা স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে শুভদের বাসায় যান। তিনি শুভর বাবার কাছে চাদনীকে উত্ত্যক্ত না করার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু শুভর বাবা গত শুক্রবার রাত ৮টারদিকে লোকজন নিয়ে চাদনীদের বাসায় গিয়ে তার বাবাকে হুমকি দেন ও মেয়ের চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এ সময় তাঁদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা ও হাতাহাতি হয়। বিষয়টি নিয়ে চাদনীর বাবা অপমান বোধ করেন এবং মেয়েকে বকাঝকা করেন। এ ঘটনার পর রাত ১০টার দিকে চাদনী ঘরের আড়ার সঙ্গে শাড়ী বেধে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে।
চাদনীর চাচা ডা. পারভেজ বলেন, শুভ ও তাঁর বাবার আচরণের কারণেই চাদনী আত্মহত্যা করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লবণচরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে চাদনীর লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। শনিবার বিকেলে নগরীর নিরালা কবরখানায় লাশ দাফন করা হয়েছে। হত্যার ঘটনায় থানায় একটি মামলা হলেও এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।