শুক্রবার, ০১ নভেম্বর ২০২৪ ১৭ই কার্তিক ১৪৩১
Smoking
 
শত শত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষায়
প্রকাশ: ০৯:৩৭ am ২৮-০৮-২০১৭ হালনাগাদ: ০৯:৪৪ am ২৮-০৮-২০১৭
 
 
 


কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার অন্তত ছয়টি পয়েন্ট দিয়ে বিজিবি ও সরকারি অন্যান্য সংস্থার সদস্যদের ফাঁকি দিয়ে দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তারা পায়ে হেঁটে, কোনো কোনো স্থানে ইজিবাইকে উখিয়ার কুতুপালং ও পালংখালীর বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে (স্থানীয় ভাষায় রোহিঙ্গা টাল) আশ্রয় নিচ্ছে। তবে বিজিবি কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন বরাবরের মতোই বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের বিষয়টি অস্বীকার করে চলেছে। মিয়ানমারের মংডু এলাকায় সে দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ আরও চার রোহিঙ্গা চিকিত্সা নিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

গতকাল সকালে সরেজমিন দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু সীমান্তের নোম্যান্স ল্যান্ডে শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। তবে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিজিবি) সদস্যরা কঠোর অবস্থান নিয়ে ওইসব রোহিঙ্গাকে ঘেরাও করে রেখেছে। এদিকে নিজেদের মাতৃভূমি মিয়ানমার থেকে গত শনিবার পালিয়ে এসে ঘুমধুমের সীমান্তবর্তী জনপদ জলপাইতলী, তুমব্রু, পশ্চিমকুল, কোনারপাড়া ও বাইশফাঁড়িতে অবস্থানরত প্রায় দুই হাজার রোহিঙ্গাকে গত দু’দিন ধরে পাহারা দিচ্ছে বিজিবি সদস্যরা। সীমান্ত এলাকায় বসবাসরত বাংলাদেশি নাগরিকরা রোহিঙ্গাদের পানি ও তৈরি খাবার সরবরাহ করছে। ওইসব মানবিক কার্যক্রম সরাসরি তদারকি করছেন ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ ও প্যানেল চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন। কামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বাংলাদেশের ভূখণ্ডে চলে আসা রোহিঙ্গাদের বিজিবি পাহারা না বসালে ওইসব রোহিঙ্গা পার্শ্ববর্তী বালুখালী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরে পালিয়ে গিয়ে আশ্রয় নিত। ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ জানিয়েছেন, গত শনিবার বিকেল ৪টার দিকে ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ঢেঁকিবনিয়া বাজার ও উত্তর ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় প্রচণ্ড গোলাগুলি শুরু হয়। গোলাগুলির সময় ঢেঁকিবনিয়ার দিক থেকে শত শত রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ-শিশু বাংলাদেশ সীমান্তের দিকে চলে আসতে থাকে। ওইসব রোহিঙ্গা প্রথমে ঘুমধুম সীমান্ত চৌকিসংলগ্ন প্রস্তাবিত এশিয়ান হাইওয়ের বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতু দিয়ে বাংলাদেশ ভূখণ্ডে ঢোকার চেষ্টা করলে বিজিবি তাদের বাধা দেয়। পরে সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে শত শত রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢোকার চেষ্টা করে। তবে বিজিবির কঠোর অবস্থানের কারণে রোহিঙ্গারা নোম্যান্স ল্যান্ডে অবস্থান নেয়। ঘুমধুমের তুমব্রু সীমান্তে বসবাসরত গ্রামবাসী জানিয়েছেন, গতকাল সকাল ৮টা-৯টা পর্যন্ত মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ঢেঁকিবনিয়া এলাকায় মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্যাপক গুলিবর্ষণ করেছে। বিজিবি কর্তৃপক্ষ বলছে, আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য বিজিপি গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটাচ্ছে। জলপাইতলীতে অবস্থানরত মিয়ানমারের মংডুর ঢেঁকিবনিয়া গ্রামের রোহিঙ্গা মুজিবুর রহমান, আনোয়ার উল্লাহ, রশিদ আহমদ, আবুল কালাম, আবদুল্লাহ, জাহেদা বেগম, জয়নালউদ্দিন, ওয়াজ খাতুন, জুহুরা বেগম, রোকিয়া বেগম ও আছমাদের সঙ্গে গতকাল সকাল ১০টার দিকে কথা হয়। তারা জানান, গত শনিবার বিকেল ৪টায় গ্রাম থেকে পালিয়ে এসে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। তাদের ভাষ্য, মিয়ানমারের ওপারে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসার জন্য অবস্থান করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ঘরবাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। সহায়-সম্পদ নিয়ে যাচ্ছে এবং মেয়েদের ওপর চরম নির্যাতন-জুলুম চালাচ্ছে। আর পুরুষদের ধরে নিয়ে গুলি করে হত্যা করছে। এ কারণে প্রাণ বাঁচাতে তারা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া মরিয়ম বেগম (৫৫) জানান, তার স্বামী ও ছেলেকে গুলি করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী হত্যা করেছে। তিনি কোনো রকমে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছেন। গতকাল বিকেলে ৩টায় বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসাইন ঘুমধুমের সীমান্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পরিদর্শন শেষে তিনি বিকেল ৪টায় ঘুমধুম বিজিবির বিওপিতে সংবাদ ব্রিফিং করেন। এতে তিনি বলেন, মিয়ানমারের বিজিপি বাংলাদেশ ভূখণ্ডে কোনো গোলাগুলির ঘটনা এ পর্যন্ত ঘটায়নি। সীমান্ত এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হয় এমন কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বিজিপি ঘটালে তার সমুচিত জবাব দেওয়া হবে এবং সেজন্য বিজিবি প্রস্তুত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের নীতিনির্ধারক পর্যায়ে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। কোনো অবস্থাতেই একজন রোহিঙ্গাকেও বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। বাংলাদেশের ভূখণ্ডে কোনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চলতে দেওয়া হবে না। নতুন করে কোনো রোহিঙ্গার অস্তিত্ব আমরা দেখতে চাই না। এদিকে গতকাল সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বাংলাদেশে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করে উখিয়ার কুতুপালং ও বালুখালী অনিবন্ধিত রোহিঙ্গা শিবিরে প্রবেশের সময় স্থানীয় গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিরা ৭০ রোহিঙ্গাকে আটক করে উখিয়া থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। উখিয়া থানার ওসি আবুল খায়ের জানিয়েছেন, আটক ৭০ রোহিঙ্গাকে বিজিবি ৩৪ ব্যাটালিয়নের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। গুলিবিদ্ধ চার রোহিঙ্গা চমেকে : মিয়ানমারের মংডু এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর হাতে গুলিবিদ্ধ আরও চার রোহিঙ্গা চিকিত্সা নিতে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে এসেছে। এর আগে গত শনিবার রাতে চোরাইপথে তারা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। পরে গতকাল সকালে চমেক হাসপাতালে তাদের নিয়ে আসে স্বজনরা। তারা হল-মিয়ানমারের আকিয়াবের মংডু থানার দেবিন্না এলাকার নুরুজ্জামানের ছেলে জিয়াবুল (২৭), মংডু থানার নাচিদং এলাকার হামিদ হোসেনের ছেলে মো. ইলিয়াছ (২০), মংডু থানার সাহেববাজার এলাকার হোসেন আহমদের ছেলে মো. তোহা (১৬) ও একই এলাকার নবী হোসেনের ছেলে মোবারক হোসেন (২৫)। চমেক হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, হাসপাতালের ২৬ ও ২৮ নং ওয়ার্ডে তাদের চিকিত্সা চলছে।BE

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT