আমার কষ্ট হচ্ছে আপনাদের ছেড়ে যেতে। তবু ভালো লাগছে যে আত্মতৃপ্তি নিয়ে আজ বিদায় নিচ্ছি। ব্যর্থ হয়ে যাচ্ছি না। কর্মজীবনের বৃহস্পতিবার (৬ জুলাই) ছিল তার শেষ দিন। বিচারকাজ শেষে অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয় ও আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে তাকে বিদায় সংবর্ধনা জানানো হয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে আপিল বিভাগের বিচারপতিগণ, সিনিয়র আইনজীবীসহ বারের কয়েকশত আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেন, আমি কখনো জেনে শুনে ও বুঝে ভুল বিচার করিনি। সব সময় সততা নিষ্ঠা ও একাগ্রতার সঙ্গে বিচার কাজ সম্পন্ন করেছি। আল্লাহর পরেই ন্যায় বিচারকের স্থান। জেনে শুনে ভুল বিচার করলে তা হবে মহাপাপ। আইনজীবীদের সহায়তা ছাড়া বিচারকদের সঠিক বিচার করা কঠিন হয়ে যায়। বিচারক হিসেবে আমার যা অর্জন তা আইনজীবীদের কাছ থেকে। বিচারপতি নাজমুন আরা ছিলেন দেশের প্রথম নারী মুন্সেফ (সহকারী জজ), প্রথম নারী জেলা জজ, প্রথম হাইকোর্টে নারী বিচারপতি। এরপর তিনি আপিল বিভাগের প্রথম নারী বিচারপতি হিসেবে কাল থেকে অবসরে যাবেন। যদিও সুপ্রিম কোর্টের পঞ্জিকা অনুযায়ী তার অবসরের মেয়াদ ৭ জুলাই। ওই দিন শুক্রবার হওয়ায় আগের দিন বৃহস্পতিবারই তার শেষ কর্মদিবস। প্রথা অনুসারে ওই দিন তাকে সংবর্ধনা দেওয়ার কথা সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের পক্ষ থেকে। তাদের সংবর্ধনার জবাবে তিনিও বক্তব্য রাখতে পারেন। ১৯৫০ সালের ৮ জুলাই মৌলভীবাজারে জন্মগ্রহণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে তার শৈশব কেটেছে ময়মনসিসংহ জেলার গফরগাঁওয়ে। বাবা আবুল কাশেম মঈনুদ্দীন ও বেগম রশীদা সুলতানা দীনের এই সন্তান ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৬৫ সালে তিনি এসএসসি পাস করেন। ১৯৬৭ সালে ময়মনসিংহের মুমিনুন্নেসা উইমেন্স কলেজ থেকে এইচএসসি এবং আনন্দমোহন কলেজ থেকে ১৯৬৯ সালে বিএসসি ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে বিচারপতি সুলতানা ১৯৭২ সালে এলএলবি পাস করেন। একই বছর তিনি ময়মনসিংহ জেলা আদালতের আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন। বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ১৯৭৫ সালের ২০ ডিসেম্বর মুন্সেফ (সহকারী জজ) হন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি অন্তর্ভুক্ত হয়ে যান ইতিহাসের অংশ হিসেবে। দেশ ও বিচার বিভাগের ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী বিচারক।