বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪ ৭ই অগ্রহায়ণ ১৪৩১
Smoking
 
ইটের আকার ছোট করে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন ভাটা মালিকরা
প্রকাশ: ১১:০১ am ২৯-০১-২০১৮ হালনাগাদ: ১১:০৩ am ২৯-০১-২০১৮
 
 
 


কুষ্টিয়া প্রতিনিধি: ইটের আকার ছোট করে ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে কুষ্টিয়ার ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে। কেনার সময় চোখে না পরলেও কাজ করতে গিয়ে বিপাকে পড়ছেন নির্মাতা ও ঠিকাদাররা। এমন প্রতারণার সত্যতা স্বীকার করলেও জনবল সংকট ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কুষ্টিয়ার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ থেকে জানা গেছে, সরকারি স্ট্যান্ডার্ড অনুযায়ী একটি ইটের আকার হতে হবে সাড়ে ৯, সাড়ে ৪ এবং পৌনে ৩ ইঞ্চি বা ১১৭ দশমিক ৫৬ ঘন ইঞ্চি। কিন্তু বাস্তবে ল্যাব টেস্টে দেখা গেছে ভাটার অধিকাংশ ইটের আয়তনই ৯৫ থেকে ৯৮ ঘনইঞ্চি। ল্যাব ইনচার্জ  প্রকৌশলী তানভির আহমেদ বলছেন এতে করে প্রকৌশলীরা ড্রইং ডিজাইন ধরে যত নিখুঁত এস্টিমেটই করুন না কেন, কোনো লাভ হবে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুষ্টিয়া জেলায় ১৪৯টি ইটভাটা এক মৌসুমে ৩৮ কোটি ২৫ লাখ ইট বিক্রি করে। সে হিসাবে সবগুলো ভাটা যদি ইটের আকার ছোট করে, তাহলে প্রতি বছর অবৈধভাবে প্রায় ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করছেন ভাটা মালিকরা। ক্রেতারা জানিয়েছেন, অবকাঠামো নির্মাণের শুরুতেই প্রকৌশলীদের দেয়া ড্রইং/ডিজাইন ও পরিমাপগত নির্দেশনা মতো কাজ শুরু করার পরই ঘটছে বিপত্তি। কোনোভাবেই হিসাব মেলাতে পারছেন না তারা। ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রাক্কলিত ব্যয়। বাড়ি নির্মাণে হাত দিয়ে এমন ঝামেলায় পড়েছেন কুষ্টিয়া শহরের কোর্ট পাড়াস্থ অ্যাডভোকেট শামীমুল হাসান অপু। তিনি বলেন, আমার ১২০০ বর্গফুটের এক ইউনিটের ভবন করতে প্রকৌশলীর কাছ থেকে ডিজাইন, নির্মাণসামগ্রীর পরিমাণগত নির্দেশনা ও প্রাক্কলন ব্যয়ের ধারণা নিয়ে কাজে হাত দিয়েছি। কিন্তু পূর্বনির্ধারিত ৩০ হাজার ইটের ধারণা ভেস্তে গিয়ে আমাকে কিনতে হয়েছে ৪০ হাজার ইট। শুধু ইট বাবদই আমার ৮০ হাজার টাকা বেশি লেগেছে। সিমেন্ট, বালু, শ্রমিকসহ আনুষঙ্গিক খরচ তো আছেই। বিষয়টি প্রকৌশলীর কাছে জানতে চাইলে তিনি ইটের আকার ছোট হওয়াকে প্রধান কারণ বলে জানিয়েছেন। এমন ভোগান্তিতে পড়া ঠিকাদার হাজি গোলাম মহসিন জানান, সরকারি দরপত্রের প্রাক্কলন ব্যয় ধরে কাজ করতে গিয়ে লোকসানের মুখে পড়তে হচ্ছে। শিডিউল অনুযায়ী ইটের সংখ্যা ধরে নির্ধারিত কাজ সম্পন্ন করা যাচ্ছে না। সড়ক কিংবা ভবন নির্মাণে একদিকে ধারণার চেয়ে বেশি ইট লাগছে, খোয়া তৈরির সময়ও ইট এবং সিমেন্ট-বালুর খরচ বেশি পড়ছে। নির্মাণ শ্রমিক আসাদুল মিঞা বলেন, ইটের আকার ছোট হওয়ায় শুধু মালিকরাই লোকসান দিচ্ছেন না, লেবার বেশি লেগে যাওয়ায় চুক্তিভিত্তিক কাজে আমরাও ক্ষতির মুখে পড়ছি। যে দেয়ালে এক হাজার ইট লাগার কথা, সেখানে ১ হাজার ২০০ ইট লাগছে। চুক্তিভিত্তিক কাজ ধরলে আমাদের হাতে আর কিছু থাকছে না। প্রতারণার কথা স্বীকার করে গণপূর্ত বিভাগ, কুষ্টিয়ার উপসহকারী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, গণপূর্ত বিভাগ থেকে ইটের সঠিক আকারের নির্দেশনা দেয়া আছে। কিন্তু বিভিন্ন সময় আমাদের ঠিকাদাররা এসে অভিযোগ করেন ইট বেশি লেগে যাচ্ছে। এ দায় অসাধু, অতি মুনাফালোভী ভাটা মালিকদের। তারা ভোক্তাদের ঠকাচ্ছেন। এদিকে ভোক্তাকে না জানিয়ে ইটের আকার ছোট করার কথা স্বীকার করলেও প্রতারণার অভিযোগ অস্বীকার করছেন কুষ্টিয়া জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমীন আজম। তিনি উল্টো এর পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এতে ভাটা মালিকের কোনো দোষ নেই। ক্রেতারা এক হাজার ইট কিনতে ১ টাকা কম যেখানে পান, সেখান থেকে ইট নিয়ে যান। সে কারণে ভাটা মালিকরাও ইটের আকার ছোট করছেন। ব্যবসায় সুবিধা ও লাভ করতেই তারা আগেই ইটের ফর্মা ছোট-বড় করে থাকেন। এখানে সরকারি বিধিমালা থাকলেও কিছু করার নেই। এদিকে প্রতারক ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়েছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক মো. সেলিমুজ্জামান। কুষ্টিয়ায় ভোক্তাকে ঠকিয়ে এক মৌসুমে ভাটা মালিকরা ৪৮ কোটি ৭৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।


এস এম জামাল, কুষ্টিয়া থেকে।

 
 

আরও খবর

Daraz
 
 
 
 
 
 
 
 
©ambalanews24.com | Developed & Maintenance by AmbalaIT