কিশোরগঞ্জে ভূমি অধিগ্রহণের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় আটক জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে ৯২ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত ১টার দিকে জেলা শহরের কাতিয়ারচর এলাকায় সৈয়দুজ্জামানের বাসা থেকে এই টাকা উদ্ধার করা হয়।
অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক নাসিম আনোয়ার। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও দুদক ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবদুল ওয়াদুদ, দুদক ঢাকা বিভাগীয় কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মনিরুল ইসলাম ও মো. ফজলুল বারী।
মো. আবদুল ওয়াদুদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সৈয়দুজ্জামানের বাড়ি তল্লাশি করে আলমারিসহ বিভিন্ন গোপন স্থানে রাখা ৯২ লাখ টাকা পাওয়া যায়। উদ্ধার করা টাকা ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষতিপূরণের সরকারি তহবিলের আত্মসাৎ হওয়া টাকার অংশ বলেই দুদকের ধারণা। উদ্ধার করা টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হবে বলে দুদকের তদন্ত দল জানিয়েছে।
ভূমি অধিগ্রহণের সরকারি তহবিলের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলামকে গত ১৭ জানুয়ারি গ্রেপ্তার ও মামলা দায়ের করে দুদক।
গ্রেপ্তারের পর পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে সেতাফুল ইসলাম ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
সেই সময় সেতাফুল ইসলাম জানান, টাকা আত্মসাতের ঘটনার সঙ্গে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) দুলাল চন্দ্র সূত্রধর, সহকারী ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মাইনুল ইসলাম এবং জেলা হিসাবরক্ষণ কার্যালয়ের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও অফিস সহায়ক মো. দুলাল মিয়াসহ আরো কয়েকজন জড়িত। এর মধ্যে টাকা আত্মসাতের কাজে সহায়তা করার জন্য অডিটর সৈয়দুজ্জামানকে পাঁচ লাখ আর অফিস সহায়ক দুলাল মিয়াকে এক লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে বলে জানান সেতাফুল।
সেতাফুলের দেওয়া জবানবন্দির সূত্র ধরেই কিশোরগঞ্জের গত ৬ ফেব্রুয়ারি জেলা হিসাবরক্ষণ অফিসের অডিটর মো. সৈয়দুজ্জামান ও পিয়ন দুলাল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে দুদক। তিন দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদের পর দুজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে অপরাধে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। এর ভিত্তিতে সৈয়দুজ্জামানের বাসায় অভিযান চালিয়ে ওই টাকা উদ্ধার করা হয়।
দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহ অঞ্চলের সহকারী পরিচালক রাম প্রসাদ মণ্ডল বাদী হয়ে সেতাফুলকে একমাত্র আসামি করে কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের জন্য কিশোরগঞ্জে কয়েকশ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়। এসব ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়ার সময় জালিয়াতির আশ্রয় নেন সেতাফুল। জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বরাদ্দকৃত তহবিল থেকে চেকের মধ্যে সেতাফুল ইসলাম পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন।
জানতে পেরে শেষ মুহূর্তে আত্মসাতের প্রক্রিয়ায় থাকা আরো নয় কোটি টাকার চেক জব্দ করে জেলা প্রশাসন।