অস্ট্রেলিয়াকে বৃষ্টি আইনে ৪০ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এ জয়ে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে উঠেছে বাংলাদেশ। ‘এ’ গ্রুপ থেকে চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ চারে উঠেছে ইংল্যান্ড। রানার্সআপ হয়ে বাংলাদেশ। গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে হল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে।
প্রথমবারের মতো বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালে উঠল বাংলাদেশ। নিউজিল্যান্ডকে গ্রুপপর্বের শেষ ম্যাচে হারিয়ে বাংলাদেশ নিজেদের কাজ সেরে রেখেছিল। বাংলাদেশকে সেমিফাইনালে যেতে হলে আজ অস্ট্রেলিয়াকে হারতেই হত। ফলাফল বাংলাদেশের পক্ষে এসেছে! ইংল্যান্ডের দাপুটে জয় বাংলাদেশকে দিয়েছে প্রথম সেমিফাইনালের স্বাদ।
টস হেরে বাঁচা-মরার লড়াইয়ে এজবাস্টনে ব্যাটিংয়ে নেমে অস্ট্রেলিয়ার রান ২৭৭। বৃষ্টির বাঁধায় ৪০.২ ওভারে যখন খেলা বন্ধ হল, ইংল্যান্ডের রান তখন ৪ উইকেটে ২৪০। জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের তখন দরকার ৫৮ বলে ৩৮ রান, হাতে ৬ উইকেট। বৃষ্টি আইনে তখন ৪০ রানে এগিয়ে ছিল ইংল্যান্ড। মুষলধারের বৃষ্টিতে এরপর আর খেলা মাঠে গড়ায়নি। স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭.১৪ মিনিটে ইংল্যান্ডকে জয়ী ঘোষণা করেন ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফট।
ইংল্যান্ড প্রথম দুই ম্যাচ জিতে এমনিতেই সেমিফাইনাল নিশ্চিত করেছিল। আজ শেষ ম্যাচ জিতে বাংলাদেশকে সঙ্গী করল তারা। ১৫ জুন সেমিফাইনালে এজবাস্টনে ‘বি’ গ্রুপের শীর্ষ দলের মুখোমুখি বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ড জিতলেই সেমিফাইনালে বাংলাদেশ। এমন ম্যাচে ইংল্যান্ডের হয়ে গলা ফাঁটিয়েছে ষোলো কোটি প্রাণ! পুরো বাংলাদেশ আজ স্টোকস, রুটদের সমর্থক ছিল। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিটি উইকেটে উল্লাস করেছে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের প্রতিটি বাউন্ডারি, ওভার বাউন্ডারিতে নেচেছে বাংলাদেশ। বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টের সেমিফাইনালের আনন্দ যে কতটা বড় তা আজ বুঝতে পেরেছে লাল-সবুজের বাংলাদেশ। এজন্য মাশরাফিদের কৃতিত্বটাই সবথেকে বড়। ধন্যবাদ দিতে হবে এউইন মরগানের দলকেও। তারা না জিতলে আজ জিতত না বাংলাদেশও!
অস্ট্রেলিয়াকে অল্পরানে আটকে রেখে জয়ের ভিত প্রথম ইনিংসেই গড়ে দিয়েছিলেন মার্ক উড ও আদিল রশীদ। পেসার উড ও স্পিনার রশীদ ৪টি করে উইকেট নিয়েছেন। শুরুতে ২ উইকেট নেয়ার পর শেষ দিকে ২ উইকেট নেন উড। লেগ স্পিনার রশীদ মিডল অর্ডার ও লেট অর্ডারের ব্যাটসম্যানদের উইকেট পেয়েছেন। সব মিলিয়ে বোলিংয়ে লেটার মার্কস পেয়েছে ইংলিশ বোলাররা।
অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা ভালো হয়েছিল ওয়ার্নার ও ফিঞ্চের হাত ধরে। ৪০ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়ার পর ওয়ার্নার আউট হন ২১ রানে। দ্বিতীয় উইকেটে ৯৬ রানের জুটি গড়েন স্মিথ ও ফিঞ্চ। এ সময়ে ফিঞ্চ হাফ-সেঞ্চুরি তুলে নেন। তবে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। রানের চাকা বাড়াতে গিয়ে স্টোকসের বলে ৬৮ রানে আউট হন ডানহাতি এ ওপেনার। এ জুটি ভাঙার পর নতুন করে দাঁড়াতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। স্মিথের ৫৬ ও শেষ দিকে হেডের ক্যামিও ইনিংসে ২৭৭ রানের পুঁজি পায় অস্ট্রেলিয়া। ৬৪ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় ৭১ রান করেন হেড।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৩৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বেশ বিপাকে পড়েছিল ইংল্যান্ড। এরপর ম্যাচের দৃশ্যপটে পরিবর্তন। গতকাল কার্ডিফে মাহমুদউল্লাহ ও সাকিব যে কাজটা করেছিলেন, আজ সেই ভূমিকায় এউইন মরগান ও বেন স্টোকস। ১৫৭ বলে ১৫৯ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। তাতেই ম্যাচ নাগালের বাইরে চলে যায়। রান আউটে মরগান ৮৭ রানে ফিরলেও ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি তুলে দলকে জিতিয়েছেন স্টোকস। অপরাজিত ছিলেন ১০২ রানে। সাথে ছিলেন জস বাটলার ২৯ রানে।
স্টার্ক, হ্যাজেলউড শুরুতে আক্রমণ চালালেও পরবর্তীতে ছিলেন ছন্দহীন। অন্যদিকে মরগান, স্টোকস দাপট দেখিয়ে কড়া ভাষায় শাসন করেন অসি বোলারদের। টুর্নামেন্টের হট ফেবারিট তাদেরকে কেন বলা হচ্ছে সেটা আরেকবার প্রমাণও দিল স্টোকস, মরগানরা।