একসময় ক্যান্সার মানেই ছিল নিশ্চিত মৃত্যু। তারপর এলো এর চিকিৎসা। আর এখন আমরা পা বাড়িয়েছি এমন এক ভবিষ্যতের পথে যখন ক্যান্সার হবার আগেই তার সম্ভাব্য কারণ চিহ্নিত করে নিজেদের সুরক্ষিত করতে পারবো। তাই শুধু সঠিক তথ্যের অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে কেন থাকবেন? আজ জানুন জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে আপনি কি করতে পারেন।
মহিলাদের জরায়ুর নিচের অংশ অর্থাৎ সারভিক্সের কোষ যখন অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে তখনি দেখা দেয় সারভাইক্যাল ক্যান্সার তথা জরায়ুমুখের ক্যান্সার। এর কারণ হিসেবে একটি ভাইরাসকে চিহ্নিত করা হয়েছে যার নাম হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি)। সাধারণত এই ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক সম্পর্কের মাধ্যমে এটি ছড়িয়ে পড়ে। তবে এইচ পি ভি অনেক রকমের হয়ে থাকে এবং সবগুলো সারভাইক্যাল ক্যান্সারের জন্য দায়ীও নয়। তাই মহিলারা প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর, বিশেষ করে বিয়ের পর তাদের মধ্যে এই ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা গেলেও, এটি নিজে থেকে সেরে যেতে পারে বা জননতন্ত্রের আঁচিল তৈরী করতে পারে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সংক্রমণ জরায়ুমুখের ক্যান্সারে রূপ নেয়।
সারভাইক্যাল ক্যান্সারের উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে স্বাভাবিক মাসিক ছাড়াও অস্বাভাবিক রক্তপাত, তলপেটে ব্যথা ইত্যাদি। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ নির্ণয় করা গেলে যথাযথ চিকিৎসা সম্ভব। তবে সচেতন থাকলে এই ক্যান্সার অনেকটাই প্রতিরোধ করা যায়। বাংলাদেশে সরকারীভাবে জরায়ুমুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ ও নির্ণয়ের জন্য ন্যাশনাল সারভাইক্যাল ক্যান্সার স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম রয়েছে। এর আওতায় এমনকি জেলা পর্যায়েও ত্রিশ বছরের বেশী বয়সী নারীদের প্রতি ৩ বছর অন্তর বিনামূল্যে ভায়া (VIA) টেস্ট করা হয়। ভায়া টেস্টের মাধ্যমে সহজেই সারভাইক্যাল ক্যান্সারকে একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে নির্ণয় করা সম্ভব।
এর পাশাপাশি হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ভ্যাক্সিন রয়েছে, যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ভাইরাসটির বিরুদ্ধে কাজ করে। এটি তিনটি ডোজে সাধারণত হাতের উপরের অংশে মাংশপেশীতে দেয়া হয়। প্রথম ডোজ ৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী মহিলাদের যে কোন সময় দেয়া যায়। এর এক মাস পর দ্বিতীয় ডোজ এবং ছয় মাস পর তৃতীয় ডোজ দিতে হবে। এই ভ্যাক্সিনের তেমন কোন গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। এছাড়া কনডমের ব্যবহার এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা সুরক্ষা যোগায়।
কথায় বলে সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। আজকের একটু সাবধানতা হয়তো আগামীকাল ক্যান্সারের বিরুদ্ধে ঢাল হয়ে দাঁড়াতে পারে, অনেক কষ্টকর পরিস্থিতি থেকে মুক্তি দিতে পারে। তাই সুস্থ থাকতেই সুস্থতার মর্যাদা দিন, ক্যান্সার প্রতিরোধে এগিয়ে আসুন।