অনেকে মনে করেন, মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা স্ট্রোক কেবল পুরুষের অসুখ। কিন্তু বিশ্বে নারী মৃত্যুর তৃতীয় প্রধান কারণ স্ট্রোক। আমেরিকান স্ট্রোক অ্যাসোসিয়েশন বলছে, প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রে যত মানুষ স্ট্রোকের কারণে মারা যায়, তাদের ৬০ শতাংশ নারী।
উচ্চ রক্তচাপ, ধূমপান, রক্তে চর্বির আধিক্য, কায়িক শ্রমের অভাব—এসব কারণে পুরুষ ও নারী উভয়ের মধ্যেই স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতের ঝুঁকি বাড়ে বটে, কিন্তু এসবের বাইরেও নারীদের কিছু বিশেষ ঝুঁকি আছে। যেমন: দীর্ঘদিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন, গর্ভাবস্থা, লুপাস বা মাইগ্রেন রোগ (নারীদের বেশি হয়), হরমোন রিপ্লেসমেন্ট ওষুধ সেবন ইত্যাদি। বাতজ্বরজনিত হৃদ্রোগ থেকে জটিলতা হয়ে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও আমাদের দেশের নারীদের কম নয়। আবার নারীদের ক্ষেত্রে অনেক সময় স্ট্রোকের লক্ষণও অন্য রকম হতে পারে। একাধিক গবেষণা বলছে, স্ট্রোক-পরবর্তী নানা জটিলতা, বিশেষ করে বিষণ্নতা নারীদের মধ্যে প্রকট।
সাধারণভাবে স্ট্রোক হলে রোগীর কথা জড়িয়ে যায়, শরীরের কোনো এক দিক অবশ অনুভূত হয়, কথা অসংলগ্ন হয়ে পড়ে, মুখ বেঁকে যায়, গিলতে কষ্ট হয়। এসবের বাইরেও নারীদের ক্ষেত্রে কিছু ভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়, যেমন: মাথাব্যথা নারীদের বেশি হয় স্ট্রোকের পর। অবশ অনুভবের পাশাপাশি শরীরের কোনো দিক ঝিঁঝি করে বা অনুভূতিহীন মনে হতে পারে। হেঁচকিও উঠতে পারে।
স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে তাই নারীদের বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন। শরীরের ওজন কমান, মন্দ খাদ্যাভ্যাস ত্যাগ করুন। নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করুন। রক্তচাপ নিয়মিত মাপুন ও নিয়ন্ত্রণে রাখুন। ঝুঁকি আছে যাঁদের, তাঁরা একটানা অনেক দিন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, হরমোন বড়ি খাবেন না। গর্ভাবস্থায় ও প্রসবের পরপর অনেকের স্ট্রোক হয়। তাই এ সময় নিজের দিকে বিশেষ খেয়াল রাখুন। বারবার গর্ভপাতের ইতিহাস থাকলে কারও রক্তে অ্যান্টি-ফসফোলিপিড অ্যান্টিবডি পজিটিভ কি না যাচাই করে দেখুন—এটি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।