এ বছর বড় দুটি শিরোপা জেতা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোই পেলেন ব্যালন ডি’অর। বছর জুড়ে ব্যক্তিগত দারুণ পারফরম্যান্স এবং ক্লাব ও জাতীয় দলের হয়ে সাফল্যের মুকুট পরা পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড চতুর্থবারের মতো বর্ষসেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়েছেন প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার লিওনেল মেসিকে হারিয়ে।
সোমবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ফ্রান্সের প্যারিসে এক অনুষ্ঠানে ব্যালন ডি’অর জয়ী রোনালদোর নাম ঘোষণা করে ফ্রান্স ফুটবল সাময়িকী। বিশ্বজুড়ে ১৭৩ জন সাংবাদিকদের ভোটে সবাইকে পিছনে ফেলে পুরস্কারটি জিতলেন রিয়াল মাদ্রিদ তারকা।
এর আগে ২০০৮, ২০১৩ ও ২০১৪ সালে বর্ষসেরা ফুটবলারের পুরস্কার জিতেছিলেন ৩১ বছর বয়সী রোনালদো।
আগে থেকেই এই পুরস্কারের জন্য অনেক এগিয়ে থাকা রোনালদো অবশ্য ছিলেন না অনুষ্ঠানে। ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে রিয়ালের হয়ে এখন তিনি জাপানে। প্রীতি ম্যাচ খেলতে বার্সেলোনা দলের সঙ্গে কাতারের পথে মেসিও।
গত অক্টোবরে এই পুরস্কারের জন্য ৩০ জনের সংক্ষিপ্ত তালিকা প্রকাশ করেছিল ফ্রান্স ফুটবল। লড়াইয়ে ছিলেন গতবারসহ পাঁচবারের বর্ষসেরা মেসি, গত বছর তৃতীয় হওয়া নেইমার, বার্সেলোনার গত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতা লুইস সুয়ারেস, বছর জুড়ে ক্লাব ও দেশের হয়ে দুর্দান্ত খেলা ফরাসি ফরোয়ার্ড অঁতোয়ান গ্রিজমানের মতো তারকারা।
দ্বিতীয় সেরা হয়েছেন বার্সেলোনার হয়ে গত মৌসুমে লা লিগা ও কোপা দেল রে জেতা মেসি। আতলেতিকো মাদ্রিদের তারকা গ্রিজমান হয়েছেন তৃতীয়। উরুগুয়ের তারকা স্ট্রাইকার সুয়ারেস চতুর্থ ও ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার পঞ্চম হয়েছেন।
বছর জুড়ে অসাধারণ খেলা রোনালদোর ব্যক্তিগত ও দলগত সাফল্য ছিল আকাশচুম্বী। রিয়ালের হয়ে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার দুই মাসের মধ্যে গত জুলাইয়ে দেশকে প্রথমবারের মতো ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপ জেতাতে নেতৃত্ব দেন তিনি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের গত আসরে সর্বোচ্চ ১৬ গোল করা ও চারটি গোল করানো রোনালদোকে সেমি-ফাইনাল ও ফাইনালে ঠিক স্বরূপে দেখা যায়নি। কিন্তু আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে ফাইনালে টাইব্রেকারের জয়সূচক গোলটি করেছিলেন তিনি।
গত মৌসুমে লা লিগায় দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৫ গোল করেছিলেন রানার্সআপ হওয়া রিয়ালের এই তারকা ফরোয়ার্ড। আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছিলেন পাঁচটি গোল। এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত ১০টি গোল করেছেন তিনি।
ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপে দেশকে প্রথম শিরোপা জেতাতে নেতৃত্ব দেওয়া রোনালদো চোট পেয়ে ফাইনালের শুরুতেই ছিটকে পড়েছিলেন। কিন্তু তিন গোল করে ও সতীর্থদের দিয়ে দুটি করিয়ে দলকে ফাইনালে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল তার।
২০১৬ সালে ৪২ ম্যাচ খেলে মোট ৩৮টি গোল করেন রোনালদো, সতীর্থদের দিয়ে করান ১৪টি।
সাম্প্রতিক সময়েও জাতীয় দলের হয়ে ছন্দে আছেন রোনালদো। বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে তিন ম্যাচ খেলে করেছেন ৭ গোল।
১৯৫৬ সাল থেকে ইউরোপের সেরা খেলোয়াড়কে ব্যালন ডি’অর পুরস্কার দেওয়া চালু হয়। প্রথম পুরস্কারটি পেয়েছিলেন স্ট্যানলি ম্যাথুস। সেই সময়ে ব্ল্যাকপুলে খেলা এই সাবেক তারকা পেছনে ফেলেছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের কিংবদন্তি আলফেদ্রো দি স্তেফানোকে।
১৯৯৪ সাল পর্যন্ত পুরস্কারটি শুধু ইউরোপের খেলোয়াড়দেরই দেওয়া হতো। এর পর থেকে ইউরোপে খেলা বিশ্বের যে কোনো খেলোয়াড়ের জন্য পুরস্কারটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। আর ২০০৭ সাল থেকে ইউরোপের সেরা নয়, পুরস্কারটি দেয়া হতে থাকে বিশ্বের সেরা ফুটবলারকে।
ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কার আর ফ্রান্স ফুটবলের ব্যালন ডি’অর একীভূত হয়েছিল ২০১০ সালে। সেই থেকে মেসি আর রোনালদোই শুধু ‘ফিফা ব্যালন ডি’অর’ নামে পরিচিত পুরস্কারটি জেতেন। ফিফার সঙ্গে চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ায় এ বছর থেকে আবার একাই ব্যালন ডি’অর দেওয়া শুরু করলো ফ্রান্স ফুটবল।
ব্যালন ডি’অর জয়ী নির্ধারণ করা হতো শুধু সাংবাদিকদের ভোটে। ফিফার বর্ষসেরা পুরস্কারের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পর জাতীয় দলের কোচ আর অধিনায়কদের ভোটও যোগ হয়। এখন আবার আগের নিয়মে বর্ষসেরা ফুটবলার বেছে নিচ্ছে ফ্রান্স ফুটবল।
সেরা ত্রিশ:
প্রথম: ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (রিয়াল মাদ্রিদ, পর্তুগাল)
দ্বিতীয়: লিওনেল মেসি (বার্সেলোনা, আর্জেন্টিনা)
তৃতীয়: অঁতোয়ান গ্রিজমান (আতলেতিকো মাদ্রিদ, ফ্রান্স)
চতুর্থ: লুইস সুয়ারেস (বার্সেলোনা, উরুগুয়ে)
পঞ্চম: নেইমার (বার্সেলোনা, ব্রাজিল)
ষষ্ঠ: গ্যারেথ বেল (রিয়াল মাদ্রিদ, ওয়েলস)
সপ্তম: রিয়াদ মাহরেজ (লেস্টার সিটি, আলজেরিয়া)
অষ্টম: জেমি ভার্ডি (লেস্টার সিটি, ইংল্যান্ড)
যৌথভাবে নবম: জানলুইজি বুফ্ফন (ইউভেন্তুস, ইতালি) পেপে (রিয়াল মাদ্রিদ, পর্তুগাল)
একাদশ: পিয়েরে-এমেরিক আউবামেয়াং (বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, গ্যাবন)
দ্বাদশ: রুই পাত্রিসিও (স্পোর্তিং লিসবন, পর্তুগাল)
ত্রয়োদশ: জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, সুইডেন)
যৌথভাবে চতুর্দশ: পল পগবা (ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ফ্রান্স), আর্তুরো ভিদাল (বায়ার্ন মিউনিখ, চিলি)
ষষ্ঠদশ: রবের্ত লেভানদোভস্কি (বায়ার্ন মিউনিখ, পোল্যান্ড)
যৌথভাবে সপ্তদশ: টনি ক্রুস (রিয়াল মাদ্রিদ, জার্মানি), লুকা মদ্রিচ (রিয়াল মাদ্রিদ, ক্রোয়েশিয়া), দিমিত্রি পায়েত (ওয়েস্ট হ্যাম, ফ্রান্স)
# ব্যালন ডি’আর ভোটাভুটির প্রক্রিয়ায় সংক্ষিপ্ত তালিকায় থাকা ৩০ জনের মধ্যে ১১ জন কোনো ভোটই পায়নি। এরা হলেন: সের্হিও আগুয়েরো (ম্যানচেস্টার সিটি, আর্জেন্টিনা), কেভিন ডি ব্রুইন (ম্যানচেস্টার সিটি, বেলজিয়াম), পাওলো দিবালা (ইউভেন্তুস, আর্জেন্টিনা), দিয়েগো গদিন (আতলেতিকো মাদ্রিদ, উরুগুয়ে), গনসালো হিগুয়াইন (ইউভেন্তুস, আর্জেন্টিনা), আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা (বার্সেলোনা, স্পেন), কোকে (আতলেতিকো মাদ্রিদ, স্পেন), হুগো লরিস (টটেনহ্যাম হটস্পার, ফ্রান্স), টমাস মুলার (বায়ার্ন মিউনিখ, জার্মানি), মানুয়েল নয়ার (বায়ার্ন মিউনিখ, জার্মানি), সের্হিও রামোস (রিয়াল মাদ্রিদ, স্পেন)।
আগের ১০ বারের বিজয়ীরা:
ব্যালন ডি’অর
২০০৬ ফাবিও কান্নাভারো
২০০৭ কাকা
২০০৮ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০০৯ লিওনেল মেসি
একীভূত ফিফা ব্যালন ডি’অর
২০১০ লিওনেল মেসি
২০১১ লিওনেল মেসি
২০১২ লিওনেল মেসি
২০১৩ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৪ ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো
২০১৫ লিওনেল মেসি