চলতি বছর বিশ্ব ইজতেমায় যোগ দেয়ার জন্য দিল্লি থেকে তাবলীগ জামাতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির ঢাকায় আগমনকে ঘিরে সংগঠনটির একাংশের কয়েকশো অনুসারী শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এলাকায় বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছেন।
ভারতীয় উপমহাদেশের সুন্নি মুসলমানদের বৃহত্তম সংগঠন তাবলীগ জামাতের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব আজ আবারও সামনে চলে এসেছে।
নেতৃত্বের কোন্দলে গত নভেম্বর মাসে বাংলাদেশে তাবলীগের কেন্দ্রস্থল কাকরাইলে দুই দল কর্মীর মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে।
তাবলীগ জামাতের একাংশের কয়েকশো কর্মী বুধবার সকালে অবস্থান নেন ঢাকায় বিমানবন্দর এলাকায়।
বেশ কয়েক ঘন্টা ধরে তাদের এ বিক্ষোভের কারণে বিমানবন্দরের সামনের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা শহরের প্রবেশমুখ থেকে শুরু করে ময়মনসিংহ সড়ক পর্যন্ত।
বিমানবন্দর এলাকায় এ বিক্ষোভ চলার সময় বেলা সাড়ে বারোটার দিকে মাওলানা সাদ ঢাকায় এসে পৌঁছান। কিন্তু তাঁকে বিমানবন্দরের ভেতরেই কয়েক ঘণ্টা ধরে অবস্থান করতে হয়।
এক পর্যায়ে বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশের পাহারায় মাওলানা সাদকে বিমানবন্দর থেকে কাকরাইল মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানেই তাঁকে রাখা হয়েছে। এর কিছু সময় পরে বিক্ষোভকারীরা তাদের কর্মসূচী সেখানে শেষ করে।
এখন মাওলানা সাদ শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেবেন কী নেবেন না সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে তাবলীগ জামাতের দুই অংশের মধ্যে।
যদিও দুটি অংশের নেতারাই বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নিচ্ছেন। টঙ্গিতে তুরাগ নদীর পাড়ে এ ইজতেমার সব আয়োজন এখন শেষ পর্যায়ে।
তাবলীগ জামাতের একটি অংশ বলছে ভারত থেকে আসা মাওলানা সাদ এবার ইজতেমায় অংশ নেবেন না। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের এমন আশ্বাস দেয়া হয়েছে। অন্য অংশ চাইছে মাওলানা সাদ ইজতেমায় অংশগ্রহণ করুক।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, তাবলীগ জামাতের দুই অংশের নেতাদের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিষয়টির সমাধান হবে বলে সরকার মনে করছে।
দক্ষিণ এশিয়ায় তাবলীগ জামাতের মূল কেন্দ্র হচ্ছে দিল্লিতে। সেখানকার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মাওলানা সাদকে কেন্দ্র করে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন অনেক আগে।
এর প্রভাবে পাকিস্তান এবং মালয়েশিয়াসহ এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশগুলোতে বিভক্তি এসেছে বলে ঢাকায় সংগঠনটির নেতারা বলছেন।
এখন বাংলাদেশেও সে বিভক্তি প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। তাবলীগ জামাতের নেতারা বলছেন, মাওলানা সাদ বিভিন্ন সময় যেসব মন্তব্য করেছেন সেগুলো নিয়ে বাংলাদেশে তাবলীগ জামাতের নেতৃত্বের মধ্যে মতবিরোধ চলছিল প্রায় দুই বছর ধরে।
গত বছরের নভেম্বরে একটি বৈঠকে সেই বিরোধ হাতাহাতিতে রূপ নিয়েছিল। দু'পক্ষই বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন সুষ্ঠুভাবে করার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছিল।
তখন তাবলীগ জামাতের দুই অংশের নেতৃবৃন্দ এবং ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় কয়েক-দফা আলোচনা করেছে।
বিরোধ মেটানোর জন্য ইসলামী চিন্তাবিদদের নিয়ে সরকারের গঠিত একটি উপদেষ্টা কমিটি কাজ করছে। সে উপদেষ্টা কমিটির অন্যতম সদস্য মাওলানা মাহমুদ হাসান।
তিনি জানিয়েছেন, এখনো বিরোধ মেটানো সম্ভব হচ্ছে না। তবে তারা চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।
তাবলীগ জামাতের দুই অংশের একাধিক নেতা বলেছেন, মাওলানা সাদের মন্তব্যকে কেন্দ্র করে বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে সারা বিশ্বের তাবলীগ জামাতের অনুসারীদের মধ্যে।
ব্রিটেন, আমেরিকা এবং ইউরোপের দেশগুলোতে তাবলীগ জামাতের নেতৃত্বের বিভক্তি দেখা দিয়েছে অনেকদিন আগে।
তাদের সংগঠনের ভেতর থেকেও বিভিন্ন দেশে বিরোধ মেটানোর চেষ্টা থাকলেও তাতে এখনো ইতিবাচক ফলাফল দেখা যাচ্ছে না।