প্রায় দেখা যায় খাওয়ার প্রতি কোনো কোনো শিশুর তীব্র অনীহা থাকে। তারা খাবার মুখে নিয়ে বসেই থাকে। এক লোকমা মুখে তুলে দিলেন, তো আরেকটা আপনার হাতেই ঠান্ডা হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে। আগেরটা শেষ করলে তো আরও খাওয়াবেন। সন্তানের এমন আচরণে অনেক সময় মা-বাবার ধৈর্য হারিয়ে যায়। কেউ কেউ আবার শিশুটিকে অসুস্থ ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু এ রকম আচরণের কারণ কী? গবেষকেরা বলছেন, শিশুদের খাবারে অনীহার পেছনে অন্যতম কারণগুলো হলো জোর করে খাওয়ানো, শক্ত খাবার, অপছন্দের খাবার এবং একই খাবারের পুনরাবৃত্তি।
এর বাইরে যুক্তরাজ্যের কিছু গবেষক এ আচরণের পেছনে আরও কিছু কারণ নির্দেশ করেছেন।
১. শিশুটি হয়তো সব কাজেই ধীরগতির।
২. আপনার সন্তান হয়তো চায়, আপনি আরও বেশি সময় তার কাছে থাকুন। কারণ, খাবারটা খাইয়েই আপনি সংসারের অন্য কাজে মনোযোগী হয়ে পড়বেন। তাই ইচ্ছা করেই দেরি করে।
৩. শিশুটি হয়তো খাবারের চেয়ে অন্য কিছুর প্রতি বেশি মনোযোগী, যেমন টিভি দেখা বা কোনো খেলনা।
৪. খাবারটা হয়তো খুব শক্ত, চিবুতে সময় লাগছে।
৫. খাবারের স্বাদ ভালো না হলে বা শিশুর অপছন্দ হলেও খেতে সময় নেয়।
এ থেকে মুক্তির উপায়ও কিছু আছে। সমাধান:
* খাওয়ার সময় টিভি বন্ধ রাখতে হবে। শিশুকে খেলনাও দেবেন না। মায়েদের অনেকে সন্তানকে খাওয়ানোর সময় টিভি বা মুঠোফোনে কার্টুন চালিয়ে রাখেন, দেখার ফাঁকে খাবার গিলিয়ে দিতে চেষ্টা করেন। এটা খারাপ অভ্যাস। খাওয়ার সময় শিশুর মনোযোগ খাবারের দিকেই থাকবে। তাকে খাবারের বর্ণ-গন্ধ-স্বাদ বুঝতে হবে। তবেই খাবারের প্রতি তার আগ্রহ বাড়বে।
* খাওয়ার আগে শারীরিক কসরত, খেলা, লুকোচুরি, ছোটাছুটি ইত্যাদি করা ভালো। এতে শিশুর খিদে পাবে, খেতে ইচ্ছা করবে।
* বেশি শক্ত খাবার দেবেন না। স্বাদ বাড়ানোর জন্য লবণ, মসলা ইত্যাদি দিতে পারেন। দেখতেও যেন আকর্ষণীয় হয়।
* খাওয়া শেষ করার জন্য একটা সময় নির্দিষ্ট করুন। তাই বলে তাড়াহুড়া করে খুব কম সময়ে খাওয়াবেন না।
* শিশুকে খাওয়ানোর সময়টা হোক আনন্দময়। খাবার শেষ হয়ে গেলেও কিছুক্ষণ তার সঙ্গে খেলুন ও সময় কাটান।
* খাবার প্রস্তুতি, পরিবেশন ও খাদ্য গ্রহণের প্রক্রিয়ায় শিশুকেও যুক্ত করলে খাওয়ার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। বয়স দুই বছর হবার পর তাকে নিজে নিজে খেতে দিন, হাতে চামচ ধরিয়ে দিন। সে খেলতে খেলতেই খাবে, খেতে শিখবে।