বেন স্টোকস আর ওয়েন মর্গ্যানের দারুণ ব্যাটিংয়ে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়াকে বিদায় করে দিয়েছে ইংল্যান্ড। বাঁচা-মরার ম্যাচে স্টিভেন স্মিথের দলের পরাজয়ে প্রথমবারের মতো আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে পৌঁছেছে বাংলাদেশ।
শনিবার এজবাস্টনে ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ৪০ রানে জিতেছে ইংল্যান্ড। স্বাগতিকদের ইনিংসের ৪০.২ ওভারে বৃষ্টি নামলে আর খেলা সম্ভব হয়নি। সে সময়ের ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে তাদের দরকার ছিল ২০১ রান। তখন ইংল্যান্ডের স্কোর ছিল ২৪০/৪। না থেকেও এই ম্যাচে ছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া জিতলেই যে দেশে ফিরতে হত তাদের।
২৭৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল বিবর্ণ। মিচেল স্টার্কের দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লিউ হয়ে যান ছন্দ হারিয়ে ফেলা জেসন রয়। পরের ওভারের দ্বিতীয় বলে অ্যালেক্স হেলসকে বিদায় করেন জশ হেইজেলউড।
ষষ্ঠ ওভারে ফিরেন ব্যাটিং ভরসা জো রুট। ৩৫ রানে টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে তখন ধুঁকছে ইংল্যান্ড। স্বাগতিকদের জন্য সেই ওভার শেষে যেন আশীর্বাদ হয়ে এল বৃষ্টি।
খুব বেশি সময় নষ্ট হয়নি বৃষ্টিতে। প্রভাব পড়েনি ম্যাচের দৈর্ঘ্যে। তবে প্রভাব ফেলেছে ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের মনোজগতে। মানসিকভাবে শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার সুযোগ পেয়েছেন মর্গ্যান-স্টোকস।
চার দিয়ে রানের খাতা খোলা অধিনায়ক বৃষ্টির পর আবার খেলা শুরু হলে চড়াও হন অতিথি বোলারদের ওপর। শুরুতে শান্তই ছিলেন স্টোকস, খানিক পরে হাত খুলতে শুরু করেন এই অলরাউন্ডারও।
বৃষ্টির আগে বোলারদের দাপটে কাঁপছিল ইংল্যান্ড। বৃষ্টির পর দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের পাল্টা আক্রমণে দিশেহারা হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ১৫৯ রানের জুটিতে ম্যাচ মুঠোয় নিয়ে নেন মর্গ্যান-স্টোকস। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি স্মিথদের।
রান আউট হয়ে মর্গ্যানের বিদায়ে ভাঙে ২৬.১ ওভার স্থায়ী জুটি। ১২ রানে ম্যাথু ওয়েডের হাতে জীবন পাওয়া অধিনায়ক ৮১ বলে ৮টি চার আর ৫টি ছক্কায় করেন ৮৭ রান।
ফিল্ডিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার ব্যর্থতার দিনে জীবন পেয়েছেন জস বাটলার। ক্যাচিং-গ্রাউন্ড ফিল্ডিংয়ে নিজেদের মান থেকে অনেক দূরে ছিল স্মিথের দল।
অবিচ্ছিন্ন পঞ্চম উইকেটে বাটলারের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়েন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজের প্রথম শতক পাওয়া স্টোকস। ১০৯ বলে ১৩টি চার আর দুটি ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ১০২ রানে।
৪১তম ওভারে আবার বৃষ্টি নামলে সেখানেই খেলার সমাপ্তি হয়। টানা দ্বিতীয় ও সব মিলিয়ে তৃতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে জয়শূন্য থাকল অস্ট্রেলিয়া।
নতুন বলে যা একটু ভুগিয়েছেন স্টার্ক, হেইজেলউড। এরপর আর কেউ খুব একটা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেননি মর্গ্যান-স্টোকসদের।
এর আগে অ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভেন স্মিথ ও ট্র্যাভিস হেডের অর্ধশতকের পরও অন্য ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় লড়াইয়ের পুঁজি পায়নি অস্ট্রেলিয়া। মার্ক উড ও আদিল রশিদের দারুণ বোলিংয়ে লক্ষ্যটা হাতের নাগালেই রাখে ইংল্যান্ড।
এজবাস্টনে শনিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে অস্ট্রেলিয়া ৪০ রানে হারায় ডেভিড ওয়ার্নারকে। ডানা মেলার আগেই বিস্ফোরক বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে দারুণ এক বলে ফেরান উড।
হারলেই বিদায় এমন ম্যাচে চমৎকার এক ইনিংস খেলেছেন অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ। ফিঞ্চের সঙ্গে ৯৬ রানের দারুণ জুটিতে দলকে দিয়েছিলেন বড় সংগ্রহের ভিত। ৮টি চারে ৬৪ বলে ৬৮ রান করা ফিঞ্চকে বিদায় করে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা জুটি ভাঙেন বেন স্টোকস।
এক সময়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ২ উইকেটে ১৬১ রান। সেখান থেকে সাড়ে তিনশর কাছাকাছি যাওয়া সম্ভব ছিল। লেগ স্পিনার রশিদ ও ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করা পেসার উডের দাপুটে বোলিংয়ে তা আর হয়নি।
ময়জেস হেনরিকেসকে বিদায় করে নিজের প্রথম উইকেট নেন রশিদ। ৫টি চারে ৫৬ রান করা স্মিথ উডের শিকার। ১৮১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা অস্ট্রেলিয়া প্রতিরোধ গড়ে হেড ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের ব্যাটে।
জমে যাওয়া জুটি ভাঙেন উড। ফিরিয়ে দেন ম্যাক্সওয়েলকে। মাত্র ৯ রানের মধ্যে ম্যাথু ওয়েড, মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সকে বিদায় করে অস্ট্রেলিয়ার বড় সংগ্রহের আশা শেষ করে দেন রশিদ। এই লেগ স্পিনার ৪ উইকেট নেন ৪১ রানে।
শেষটায় হেডের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৯ উইকেটে ২৭৭ রান করে অস্ট্রেলিয়া। শেষ ১০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা সংগ্রহ করে ৫৭ রান।
৬৪ বলে খেলা হেডের অপরাজিত ৭১ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও দুটি ছক্কায়।
ইংলিশ পেসার উড ৩৩ রানে নেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে তার আগে সেরা বোলিং ছিল ৩/৪৬।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ২৭৭/৯ (ওয়ার্নার ২১, ফিঞ্চ ৬৮, স্মিথ ৫৬, হেনরিকেস ১৭, হেড ৭১*, ম্যাক্সওয়েল ২০, ওয়েড ২, স্টার্ক ০, কামিন্স ৪, জ্যাম্পা ০, হেইজেলউড ১*; বল ০/৬১, উড ৪/৩৩, প্লানকেট ০/৪৯, স্টোকস ১/৬১, রশিদ ৪/৪১, মইন ০/২৪)
ইংল্যান্ড: ৪০.২ ওভারে ২৪০/৪ (রয় ৪, হেলস ০, রুট ১৫, মর্গ্যান ৮৭, স্টোকস ১০২*, বাটলার ২৯*; স্টার্ক ১/৫২, হেইজেলউড ২/৫০, কামিন্স ০/৫৫, হেড ০/৯, হেনরিকেস ০/৬, জ্যাম্পা,০/৫২ ম্যাক্সওয়েল ০/১৪)
ফল: ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ইংল্যান্ড ৪০ রানে জয়ী