এই কার্ডিফেই ২০০৫ সালের ১৮ জুন ইতিহাস গড়েছিল বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে জন্মদিয়েছিল রূপকথার। আজকে সেই কার্ডিফেই রচিত হলো আরেকটি রূপকথা। কিউইদের ৫ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ফলে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির সেমিফাইনালে যেতে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েই পথ খোলা রাখলো মাশরাফি বাহিনী। কালকের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া হারলেই ‘এ’ গ্রুপ থেকে শেষ চার নিশ্চিত করবে টাইগাররা।
অবশ্য ২৬৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে স্মৃতিটা সুখকর ছিল না তামিম-সৌম্যদের। শুরুতেই পড়ে যায় ব্যাটিং বিপর্যয়ে। কিউই বোলিং তোপে আসা যাওয়ার খেলায় মাতে টাইগাররা। টিম সাউদির শুরুর ওভারের দ্বিতীয় বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে ফিরে যান ওপেনার তামিম ইকবাল। মাঝে এক ওভার বিরতি দিয়ে ফের আঘাত হানেন সাউদি। এবার শিকার সাব্বির রহমান। উইকেটের পেছনে রঞ্চির হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তরুণ এই ব্যাটসম্যান। এরপর ক্রিজে থেকে কিছু করতে পারেননি আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও। পঞ্চম ওভারে সাউদির বলেই এলবিডাব্লিউ হয়ে ফেরেন বাঁহাতি এই ওপেনার। মাঝে কিছুক্ষণ প্রতিরোধ দেওয়ার চেষ্টায় ছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশিফকুর। ১২তম ওভারে এই জুটিকেও ভেঙে দেন পেসার অ্যাডাম মিলনে। দুর্দান্ত এক গতির বোলিংয়ে উপড়ে ফেলেন মুশফিকের স্ট্যাম্প।
এরপর অবশ্য যা রচিত হয়েছে তা ইতিহাস। সাকিব আল হাসান ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের জুটিতে ভর করেই জয়ের কঠিন পথ সহজ করে টাইগাররা। দুজনের ব্যাটে ভর করেই বাংলাদেশ পার করে শত রান। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের হয়ে যে কোনও উইকেটের সেরা জুটিও গড়েছেন দুজন। সাকিব সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন ছক্কা মেরে। বিদায় নেন অবশ্য ১১৪ রানে। যেখানে ছিল ১১টি চার ও একটি ছয়। আর মাহমুদউল্লাহও করেন সেঞ্চুরি। সাকিবের বিদায়ের পর চার মেরে পূরণ করেন নিজের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরি। মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ছিলেন ১০২ রানে। যেখানে ছিল ৮টি চার ও দুটি ছয়। বাংলাদেশ জয় তুলে নেয় মোসাদ্দেকের ব্যাটেই। জয় পায় ৪৭.২ ওভারে।
চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে টিকে থাকতে হলে আজকে জিততেই হবে। এমন পরিসংখ্যান মাথায় নিয়েই টস জিতে ব্যাট করতে নেমেছিল নিউজিল্যান্ড। শুরুটা ভালো করলেও বাংলাদেশের বোলিং তোপে ধীরে ধীরে ইনিংসের চিত্র পাল্টে দেয় মাশরাফি বাহিনী। তাতেই ৮ উইকেটে ৫০ ওভারে ২৬৫ রানের সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছে নিউজিল্যান্ড।
কার্ডিফে মাশরাফি মুর্তজার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে শুরু করেছিল টাইগাররা। যদিও মার্টিন গাপটিল ও লুক রঞ্চির উদ্বোধনী জুটি ভেঙেছেন তাসকিন আহমেদ। এরপরেই তাদের চেপে ধরে কিউইদের। ১৩তম ওভারে রুবেলের ওভারেই লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ওপেনার মার্টিন গাপটিল।
মাশরাফি তার বল দিয়ে শুরু থেকে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। প্রথম দুই ওভারে একটি মেডেনসহ মাত্র ১ রান দেন তিনি। তবে মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন বেশ খরুচে। বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিল নিউজিল্যান্ড। শেষ পর্যন্ত রঞ্চিকে ১৬ রানে মিডউইকেটে মোস্তাফিজের ক্যাচ বানান তাসকিন। ভাঙে ৪৬ রানের জুটি। এরপর গাপটিলকে নিয়ে এগোচ্ছিলেন অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। রুবেলের ওভারে ৩৩ রানে এলবিডাব্লিউ হয়ে বিদায় নেন ওপেনার গাপটিল।
দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে গিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। তৃতীয় উইকেট জুটিতে সেই চাপ কাটিয়ে উঠে কেন উইলিয়ামসন আর রস টেলরের ব্যাটে। ধীরে ধীরে হুমকি হয়ে ওঠা জুটিই ভুল করে বসে সাকিবের ৩০তম ওভারে। রানের প্রান্ত বদল করতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফেরেন কেন উইলিয়ামসন। কিউই অধিনায়ক ফেরেন ৫৭ রানে। অধিনায়ক বিদায় নেওয়ার পর এগিয়ে নিতে থাকেন রস টেলর ও নিল ব্রুম। ৩৯তম ওভারে তাসকিনের বলে আর থিতু থাকতে পারেননি টেলর। তালুবন্দী হন মোস্তাফিজের হাতে। বিদায় নেওয়ার আগে ৬৩ রান করেন তিনি।
তাতেও অবশ্য রানের চাকা সচল থাকে নিউজিল্যান্ডের। রান বাড়াতে থাকেন নিল ব্রুম ও নিশাম। তবে ৪৪তম ওভারে মোসাদ্দেকের বলে সব কিছু পাল্টে যায় কিউইদের। একে একে ফেরেন ব্রুম ও অ্যান্ডারসন। মাঝে এক ওভার বিরতি দিয়ে আবারও আঘাত হানেন মোসাদ্দেক। এবার ফেরেন ২৩ রানে ব্যাট করতে থাকা নিশাম। ৪৯তম ওভারে এরপর মিলনেকে মোস্তাফিজুর রহমান বোল্ড করলে ইনিংস আরও ছোট হয়ে আসে কিউইদের। শেষ পর্যন্ত ৮ উইকেটে ২৬১ রান তোলে নিউজিল্যান্ড।