আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে নিজেদের সেরা খেলাটা কি পাকিস্তান ফাইনালে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারতের বিপক্ষেই জমিয়ে রেখেছিল? টুর্নামেন্টে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পাকিস্তান বড় ব্যবধানে হেরেছিল ভারতের বিপক্ষে। সেই হারটা সরফরাজ আহমেদের দল বিরাট কোহলিদের ফিরিয়ে দিল একেবারে মোক্ষম ম্যাচে, ফাইনালে! কাল ওভালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে অভাবিতভাবে একেবারে একপেশে ম্যাচে ভারতকে ১৮০ রানের বিরাট ব্যবধানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হল পাকিস্তান। এ টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতল তারা। টস হেরে ব্যাট করতে নামা পাকিস্তান ৫০ ওভারে ৪ উইকেটে ৩৩৮ রানের বিশাল বোঝা ভারতের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল। সেটা তাড়া করতে গিয়ে ভারত ৩০.৩ ওভারে ১৫৮ রানেই অল আউট। পাকিস্তানের এমন জয়ের নায়ক দুজন। ব্যাটে ওপেনার ফখর জামান এবং নতুন বলে পেসার মোহাম্মদ আমির। ৩ রানে জীবন পাওয়া জামান ক্যারিয়ারের চতুর্থ ওয়ানডেতেই তুলে নেন প্রথম সেঞ্চুরি (১১৪)। আর সেটাও ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে। অন্যদিকে ভারতকে জবাবি ইনিংসে শুরুতেই ভেঙেছেন আমির। রোহিত শর্মা, কোহলি ও শিখর ধাওয়ানকে আউট করে এ বাঁহাতি পেসারই ভারতকে ব্যাকফুটে ঠেলে দেন। সেখান থেকে আর বেরোতেই পারেনি ভারত। আমিরের আগের বলটিতে কোহলির সহজ ক্যাচ ফেলেন আজহার আলী। কিন্তু পরের বলেই পয়েন্টে শাদাব খানের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ভারত অধিনায়ক। কোহলি ৫ এবং রোহিত কোনো রানই করতে পারেননি। আমিরের তৃতীয় শিকার ধাওয়ান করে যান ২১ রান। এখানেই শেষ নয়, স্পিনার শাদাব খান ও টুর্নামেন্টের সর্বাধিক উইকেট দখলকারী পেসার হাসান আলী ম্যাচ থেকে ভারতকে মোটামুটি ছিটকেই দেন। ৭২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত তখন দিশেহারা। ম্যাচের ফল তখনই সবার জানা হয়ে যায়। এমনই সময়ে হার্দিক পান্ডে ব্যাটে ঝড় তুলে গ্যালারিতে খানিকটা স্পন্দন জাগান। ৪৩ বলে ৬ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে সাজানো তার ৭৬ রানের ইনিংসটি শেষ হয় রানআউট হয়ে। তিনি এবং জাদেজা সপ্তম উইকেটে যোগ করেন ৮০ রান। পান্ডে আউট হতেই ঝটপট শেষ ভারত। হাসানের বলে অধিনায়ক সরফরাজ ভারতের শেষ ব্যাটসম্যান বুমরাহর ক্যাচ নিতেই ম্যাচ শেষ-পাকিস্তান চ্যাম্পিয়ন। এর আগে টস হারা পাকিস্তান ব্যাটিংয়ে তাদের শুরুটাই করে দারুণ। জামান ও আজহার গড়েন ১২৮ রানের ওপেনিং জুটি। ৭১ বলে ৬ চার ও ১ ছক্কায় ৫৯ রানে আজহার রানআউট হলেও থেমে থাকেনি পাকিস্তানের রানের চাকা। জামান তো সেঞ্চুরি করেছেনই, শেষদিকে ঝড় তোলেন অভিজ্ঞ মোহাম্মদ হাফিজও। ৩৭ বলে ৪ চার ও ৩ ছক্কায় ৫৭ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিল ইমাদ ওয়াসিমের হার না মানা ২৫ রানও। মাঝে বাবর আজমের অবদান ছিল ৪৬ রান। সব মিলিয়ে ভারতকে বিশাল রানের নিচেই চাপা দেয় পাকিস্তান। তা থেকে আর মুক্তি পায়নি ভারত। সংক্ষিপ্ত স্কোর পাকিস্তান : ৩৩৮/৪, ৫০ ওভার (আজহার আলী ৫৯, ফখর জামান ১১৪, বাবর আজম ৪৬, হাফিজ ৫৭*, ইমাদ ওয়াসিম ২৫*; ভুবনেশ্বর ১/৪৪, হার্দিক পান্ডে ১/৫৩, কেদার যাদব ১/২৭)। ভারত : ১৫৮/১০, ৩০.৩ ওভার (ধাওয়ান ২১, যুবরাজ ২২, হার্দিক পান্ডে ৭৬, জাদেজা ১৫; আমির ৩/১৬, হাসান আলী ৩/১৯, শাদাব খান ২/৬০, জুনায়েদ ১/২০)। ফল : পাকিস্তান ১৮০ রানে জয়ী এবং চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চ্যাম্পিয়ন। ম্যাচসেরা : ফখর জামান। টুর্নামেন্টসেরা : হাসান আলী।