জন্মের পর থেকে ১০ মাস তোফা ও তহুরা একসঙ্গে বড় হয়েছে। পিঠের কাছ থেকে কোমরের নিচ পর্যন্ত তারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত। দুজনের পায়খানার রাস্তা একটি। তবে জোড়া লাগা এই যমজের মাথা-হাত-পা আলাদা। এখন তারা আলাদা হবে। আজ মঙ্গলবার অস্ত্রোপচার করে তাদের আলাদা করবেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা।
তোফা-তহুরা ভর্তি আছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাহনূর ইসলামের অধীনে। গতকাল সোমবার হাসপাতালের সার্জিক্যাল কনফারেন্স রুমে এক সংবাদ সম্মেলনে তাদের অস্ত্রোপচারের কথা জানানো হয়। তোফা-তহুরা যেভাবে জোড়া লাগানো, চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় ‘পাইগোপেগাস’।
সংবাদ সম্মেলনের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধান আশরাফ উল হক বলেন, ‘শিশু দুটোর মেরুদণ্ডের হাড় জোড়া লাগানো, স্পাইনাল কর্ড কাছাকাছি, তাই ঝুঁকি তো আছেই। তবে আমরা আশাবাদী, অস্ত্রোপচারের পর শিশুদুটো সুস্থ-সবল থাকবে।’
অধ্যাপক আশরাফ উল হক বলেন, শিশুদুটোর অস্ত্রোপচারে বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১৬ জন সার্জন যুক্ত থাকবেন। তাদের আলাদা করার পর দুটো অপারেশন থিয়েটারে দুই দলে ভাগ হয়ে কাজ করবেন সার্জনরা। অস্ত্রোপচারে আনুমানিক সময় লাগতে পারে ছয় ঘণ্টা।
শিশু সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা জানান, বাংলাদেশের ইতিহাসে ‘পাইগোপেগাস’ শিশু আলাদা করার ঘটনা এটি প্রথম হবে। এর আগে অন্যান্য হাসপাতালে তিন জোড়া শিশুকে অস্ত্রোপচার করে আলাদা করা হয়েছে, তাদের ধরন ছিল আলাদা।
তোফা-তহুরার জন্মের আট দিনের মাথায় প্রথম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হলে অস্ত্রোপচার করে দুজনের পায়খানার রাস্তা আলাদা করে দেওয়া হয়।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে মা শাহিদা তোফা ও তহুরাকে কোলে নিয়ে বসে ছিলেন। দুজনের কপালে বড় করে কালো ‘নজর টিপ’ দেওয়া। গোলাপি জামা গায়ে। তারা ছিল খুব হাসিখুশি। তারা ক্যামেরার সামনে হেসেছে, মুখ দিয়ে শব্দ করেছে। তাদের বাবা রাজু মিয়াও এ সময় উপস্থিত ছিলেন। শাহিদা ও রাজু মিয়া গাইবান্ধায় থাকেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত তোফা-তহুরার মায়ের মুখে ছিল উৎকণ্ঠা। তারা বলেন ‘সবাই আমার মেয়েদের জন্য দোয়া করবেন।’