চে রুদ্রঃ কাকতালীয় ভাবে গতকাল এমনই একটা খবর কিছু তড়িৎকর্মা সাংবাদিকের কল্যাণে ফেসবুকে ভাইরাল হলো...
বিসিএস কর্মকর্তার ম্যাজিস্ট্রেট স্ত্রী শ্বাশুরীর সাথে এক বাড়িতে থাকতে অপারগতা জানানোয় ছেলে তার মাকে রেলস্টেশনে ফেলে চলে গেছেন...
ঘটনা হচ্ছে, ব্যাপারটা আজগুবি, মিথ্যা ও বানোয়াট...!
ব্যারিস্টার এস.এম. নামের যে ভদ্রলোক নিজের ওয়ালে এ ঘটনা শেয়ার করেছিলেন বলে দাবি করা হচ্ছে তিনি নিজেই নাকি বলেছেন ঘটনাটা বেশ আগের... কিন্তু সেই অভাগী মায়ের অনুরোধে ছেলের নাম পরিচয় প্রকাশে মানা ছিল...তিনি তার বন্ধুকে ট্রেনে উঠিয়ে দিতে গিয়ে এই বৃদ্ধা মায়ের দেখা পান... কথা বলে জানতে পারেন তার কথিত "খোকা" তাকে স্টেশনে রেখে চলে গেছে। পরে তিনি নিজের খরচে তাকে বৃদ্ধাশ্রমে ভরণপোষণের ব্যবস্থা করেন...
যদিও এই নামে কোন কোন ফেসবুক আইডি বা ব্যারিস্টার সাহেবকে এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি।
কিন্তু কিছু অতি উৎসাহী সাংবাদিক সাহেবরা ব্যাপারটায় বেশ রং মাখালেন... সাথে জুড়ে দিলেন এক বৃদ্ধার করুণামাখা ছবি, যা ২০১৫ সালে ভারতের বৃন্দাবনের আশ্রম নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রে দেখানো এক অসহায় মায়ের ছবি।
ব্যাপারটা আরো অথেনটিক করতে লাগালেন সুন্দর হাতের লেখার হিন্দি সিরিয়ালের স্টাইলে ইমোশনে ভরপুর মেলোড্রামাটিক একটা চিঠি...!
পুরোটাই মনগড়া... সাজানো...!!!
আর নয়া দিগন্ত, কালের কণ্ঠ,যুগান্তর এর মতো শীর্ষস্থানীয় পত্রিকায় এমন ডাহা মিথ্যা খবর প্রকাশ সত্যিই হতাশাজনক।
আবেগকে নাড়া দেয়ার মতো বটে,কিন্তু একটু যুক্তি দিয়ে চিন্তা করলেই এর অসংগতি গুলো চোখে পরে...!
শুধুমাত্র কিছু লাইক,কমেন্টস আর শেয়ারের কাঙাল কতিপয় ফেসবুকার প্রতিনিয়ত করে যাচ্ছে এমন মিথ্যাচার...
আর এগুলোকে ভাইরাল হতে সাহায্য করছে সবকিছুতে রং মাখাতে ওস্তাদ কিছু সাংবাদিক নামধারী স্টুপিড... যারা সুশীল সমাজের আধুনিকতা বিস্তারে নিজেদের উজাড় করে দিচ্ছেন... আজ এমন কিছু সাংবাদিকের কারণেই "মেহেন্দি নাইট" "বেবি সাওয়ার" "ইয়োলো টাচ" "ব্যাচেলর নাইট" "হাউজ ওয়ার্মিং পার্টি" "সাডেন হ্যাং আউট" ব্যাপার গুলো এভাবে ছড়াচ্ছে...
যাদের জন্যই "হলদে সাংবাদিকতা" বলে একটা আতংকজনক শব্দ খুব প্রচলিত...
আজ আমরা তো আছিই...
একে হচ্ছি আমি ইমোশনাল,তার ওপর আসল ঘটনা জানিনা...
ব্যাস... আমার মাথায়ই আসে না যে ঘটনার সত্যতা কতটুকু এইটা একটু ঘেটে দেখা দরকার...
কি দরকার... আমিও একটু চান্স নেই, বিসিএস এর গুষ্ঠি উদ্ধার করে গালাগালি দিয়ে দিলাম শেয়ার করে...
সত্যি বলতে, শিক্ষিত সমাজে বাবা-মাকে ঘরের বাইরে বের করে দেয়া হচ্ছে না বা তাদের আশ্রয় বৃদ্ধাশ্রমে হচ্ছে না,তা না... হচ্ছে...!
কিন্তু অসচেতনভাবে একজন কে গালাগালি করে এসব মিথ্যা বানোয়াট খবর ভাইরাল না করে সবার উচিৎ নিজেদের মূল্যবোধের জায়গাটাকে আরো উদার ও স্বচ্ছ করা যেন এমন কোন খবর সত্যিকার অর্থেই পত্রিকায় আসার সুযোগ না হয়...!