৪৫৭ রানের টার্গেটে পঞ্চম ও শেষ দিন ব্যাট করতে নেমে লড়াই চালাতে পারেনি বাংলাদেশ। ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় গল সিরিজে প্রতিরোধ গড়েও ম্যাচ বাঁচাতে পারেনি মুশফিকের দল। লঙ্কানদের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে হেরে যায় ২৫৯ রানের বড় ব্যবধানে। আর প্রথম টেস্ট জিতে দুই ম্যাচ সিরিজে ১-০তে লিড নিল শ্রীলঙ্কা।
আগের দিন শেষ বিকেলে টাইগারদের ব্যাটিংয়ে নামায় শ্রীলঙ্কা। তামিম-সৌম্য দারুণ ব্যাট চালিয়ে টাইগারদের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল ভালো কিছু করার। তবে, শেষ দিন দুই সেশনও খেলতে পারেনি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে সফরকারীদের ইনিংস থামে ১৯৭ রানের মাথায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
শ্রীলঙ্কা: ৪৯৪/১০ (১২৯.১ ওভার)
বাংলাদেশ: ৩১২/১০ (৯৭.২ ওভার)
শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস: ২৭৪/৬ (ডিক্লে. ৬৯ ওভার)
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: ১৯৭/১০ ( ৬০.২ ওভার)
পঞ্চম দিনের প্রথম ওভারেই আসেলা গুনারত্নের বলে সরাসরি বোল্ড হন সৌম্য সরকার। আগের দিনের ৫৩ রানের সঙ্গে এদিন আর কোনো রান যোগ করতে পারেননি এ বাঁহাতি ওপেনার। সৌম্যর বিদায়ের তিন ওভার পরই এলবির ফাঁদে পড়েন মুমিনুল হক। দিলরুয়ান পেরেরার বলে ব্যক্তিগত পাঁচ রান করে আউট হন তিনি।
টিকতে পারেননি তামিম ইকবালও। যেন শুরুতেই উইকেট বিলিয়ে আসার মিছিলে যোগ দেন। পেরেরার দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন তিনি। গুনারত্নেকে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১৯ রান এসেছে তার ব্যাট থেকে। সাকিব আল হাসান (৮) ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদও (০) উইকেটের মিছিলে যোগ দেন। রঙ্গনা হেরাথের একই ওভারে বিদায় নেন তারা।
মধ্যাহ্ন বিরতি থেকে ফিরে প্রথম ওভারেই বিদায় নেন মুশফিকুর রহিম। লাকসান সানদাকানের বলে উইকেটরক্ষক দিকওয়েলাকে ক্যাচ দিয়ে আউট হওয়ার আগে ৯৮ বলে দুই চারে ৩৪ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
মুশফিকের পর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি সেট ব্যাটসম্যান লিটন দাশ। ৩৫ রানে উপল থারাঙ্গার ক্যাচে তাকে ফেরান লঙ্কান দলপতি রঙ্গনা হেরাথ। এরই সঙ্গে নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি স্পিনার ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে পেছনে ফেলে টেস্টে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সবচেয়ে বেশি উইকেট নেওয়ার বিশ্বরেকর্ড গড়েন। লিটনকে ফেরানোর মধ্যদিয়ে তার টেস্ট উইকেট হয় ৩৬৩টি।
ব্যক্তিগত পাঁচ রানে হেরাথের চতুর্থ শিকারে পরিণত হন তাসকিন আহমেদ। কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। পরে মোস্তাফিজকে বোল্ড করে নিজের পঞ্চম উইকেট শিকার করেন হেরাথ। মিরাজ ২৮ রানে বিদায় নেন। তাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস থামিয়ে দেন হেরাথ। লঙ্কান দলপতি হেরাথ একাই তুলে নেন ৬টি উইকেট।
এর আগে ৪৫৭ রানের টার্গেটে চতুর্থ দিন শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ। তবে সৌম্য সরকারের ঝড়ো গতির হাফসেঞ্চুরি ও তামিম ইকবালের সাবলীল ব্যাটিংয়ে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬৭ রান তোলে সফরকারীরা। যদিও আলোক স্বল্পতার কারণে দিনের শেষ ১১ ওভার খেলা মাঠে গড়ায়নি। সৌম্য ৬টি চার ও এক ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৩ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন। অপরদিকে ১৩ রানে মাঠ ছাড়েন তামিম।
এর আগে উপল থারাঙ্গার সেঞ্চুরিতে (১১৫) লঙ্কানরা নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ছয় উইকেট হারিয়ে ২৭৪ রানে ইনিংস ঘোষণা করে। প্রথম ইনিংসে ভালো বল করার পর দ্বিতীয় ইনিংসেও দুটি উইকেট নেন মেহেদি হাসান মিরাজ। সাকিব আল হাসানও নিয়েছেন সমান দুটি উইকেট।
বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) তৃতীয় দিনের তৃতীয় সেশন ভাসিয়ে নেয় বৃষ্টি! মাত্র ৫১.২ ওভারের খেলা হয়। বাংলাদেশকে ৩১২ রানে অলআউট করলেও বৃষ্টির কারণে লঙ্কানদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামা হয়নি। তার আগে মুশফিক-মিরাজের ১০৬ রানের সপ্তম উইকেট জুটিতে ফলোঅন এড়ায় টাইগাররা।
অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের ব্যাট থেকে আসে ৮৫। দলীয় ৩০৮ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিদায় নেন তিনি। চার রান যোগ হতেই দলীয় ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। মিরাজ করেন ৪১। ২৩ রান করে আউট হন সাকিব আল হাসান। ১১৮ রানের ওপেনিং জুটিতে দুর্দান্ত শুরু এনে দিয়েছিলেন তামিম ইকবাল (৫৭, রানআউট) ও সৌম্য সরকার (৭১)। কিন্তু, মুমিনুল-সাকিব-লিটন-মাহমুদউল্লাহদের ব্যর্থতায় দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টের নিয়ন্ত্রণ চলে যায় লঙ্কানদের হাতে।
তিনটি করে উইকেট লাভ করেন দুই স্পিনার দিলরুয়ান পেরেরা ও দলপতি রঙ্গনা হেরাথ। সুরাঙ্গা লাকমল, লাহিরু কুমারা ও লক্ষণ সান্দাকান নেন একটি করে।
প্রথম ইনিংসে কুশল মেন্ডিসের (১৯৪) ব্যাটিং নৈপুণ্যে স্কোরবোর্ডে ৪৯৪ রান তোলে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলঙ্কা। অর্ধশতক হাঁকান অাসিলা গুনারাত্নে (৮৫), নিরোশান ডিকওয়েলা (৭৫) ও দিলরুয়ান পেরেরা (৫১)। একাই চার উইকেট দখল করেন মিরাজ। মোস্তাফিজুর রহমান দু’টি আর একটি করে নেন সাকিব, তাসকিন আহমেদ ও শুভাশিস রায়।