শুক্রবার (গতকাল) বিয়ের দিন নির্ধারিত ছিল। আয়োজনেরও কোনো ঘাটতি নেই। বাড়ির উঠোনেই শামিয়ানা টানিয়ে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। অতিথির তালিকায় আছেন পৌর মেয়র, চেম্বারের সভাপতি, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ শহরের সব গণ্যমান্য ব্যক্তি। বরযাত্রী-অতিথি সব মিলিয়ে প্রায় দুই হাজার লোকের আয়োজন। পৌরসভার কাউন্সিলরের ছোট মেয়ের বিয়ে বলে কথা! বেশ ধুমধামের সঙ্গে গত কয়েক দিন ধরেই চলছে বিয়ের নানা আয়োজন। বৃহস্পতিবার ছিল গায়ে হলুদ। গতকাল দুপুর ১২টা থেকেই শুরু হয়ে গেছে অতিথি আপ্যায়ন। বরযাত্রীও এসে হাজির। বিয়ে পড়ানোর জন্য স্থানীয় মাওলানা সবুরউদ্দিনও এসে পড়েছেন। নিমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে কাউন্সিলরদের সঙ্গে নিয়ে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও কুষ্টিয়া চেম্বারের সভাপতি হাজী রবিউল ইসলামসহ ভিআইপি সব অতিথিও বিয়েবাড়িতে এসে হাজির হয়েছেন। ঠিক সেই মুহূর্তে পুলিশ ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে নিয়ে বিয়েবাড়িতে হাজির হন সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইমলাম। দুপুর ৩টায় ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইমলাম কুষ্টিয়া পৌরসভার সম্প্রসারিত এলাকার ১৫নং ওয়ার্ডের (জুগিয়া) কাউন্সিলর মহিদুল ইসলামের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে দেখেন অতিথি আপ্যায়ন প্রায় শেষের দিকে। তখন ম্যাজিস্ট্রেট পৌর কাউন্সিলর মহিদুল ইসলামের কাছে জানতে চান আপনার মেয়ের বয়স কত? কোন ক্লাসে পড়ে? এ সময় কাউন্সিলর জানান, তার মেয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। কিন্তু আগেই খোঁজ নিয়ে ম্যাজিস্ট্রেট জানতে পেরেছেন, কাউন্সিলর মহিদুল ইসলাম তথ্য গোপন করে তার ছোট মেয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীকে বিয়ে দিচ্ছেন। মেয়েটি স্থানীয় আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণির ‘খ’ শাখার ছাত্রী। তার রোল নং ১০। বর পার্শ্ববর্তী জুগিয়া স্কুলপাড়ার নাসিরউদ্দিনের ছেলে পারভেজ আহমেদ। ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুল ইমলাম ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মর্জিনা খাতুন বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে বোঝালে কাউন্সিলর শেষ পর্যন্ত তার ভুল স্বীকার করেন এবং মুচলেকা দেন। মহিদুল মুচলেকায় উল্লেখ করেন, ‘আমি মহিদুল ইসলাম এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, আমার কনিষ্ঠ কন্যা মোছা. মোহনা আক্তারকে পার্শ্ববর্তী এলাকার ছেলে পারভেজ উভয়ের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি হওয়ার কারণে নিজের দীর্ঘদিনের মানসম্মান রক্ষার্থে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক বিবাহ দেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। কিন্তু আইনগত বাধ্যবাধকতা থাকায় সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিবাহ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলাম। পরবর্তীতে আইন মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’