গত দুই বছরে নারীর প্রতি সহিংসতা পাঁচ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
রোববার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষকে সামনে রেখে ‘বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি ২০১৫-১৬’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরে সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৩-১৪ সালের তুলনায় ২০১৫-১৬ সালে নারীর প্রতি সহিংসতা পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় নারীরা নির্মমভাবে খুন হয়েছে। অন্যদিকে, তথ্য-প্রযুক্তির দিক থেকে বাংলাদেশ এগুলেও এর নেতিবাচক ব্যবহারে নারীরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি। উদ্দেশ্যমূলকভাবে বা নারীর অসর্তকতাকে কাজে লাগিয়ে তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে হয়রানি করা হচ্ছে।
সমিতির নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট সালমা আলী বিগত দু’বছরে নারীর প্রতি সহিংসতা পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন।
প্রতিবেদনে দেশের সাতটি বিভাগের ৬৬টি থানায় দায়েরকৃত ২৩০৭টি মামলায় যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের মধ্য থেকে দ্বৈবচয়ন পদ্ধতিতে ১৯৮ জনকে বেছে নিয়ে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সালমা আলী বলেন, “জরিপের ফলাফল থেকে দেখা যায়, তিন-চতুর্থাংশের বেশি অভিযুক্ত ব্যক্তির (৮৬%) বয়স ৩৫ বছর বা এর কম। নারী ও শিশুদের প্রতি নিষ্ঠুর ও ঘৃণ্য নির্যাতনের সঙ্গে কোমলমতি শিশু ও তরুণদের জড়িত হওয়া আনুষ্ঠানিক, অনানুষ্ঠানিক, সামাজিক ও পারিবারিক নৈতিক শিক্ষার অভাবকে স্পষ্ট করে তোলে। অন্যদিকে, এক-চতুর্থাংশ (২৪%) ব্যক্তি ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টা করার দায়ে অভিযুক্ত। জরিপের ফলাফল ও আর্থ-সামাজিক অবস্থা বিবেচনা করে নির্দিষ্ট কোনো পেশা বা গোষ্ঠীকে সুনির্দিষ্টভাবে নারী ও শিশু নির্যাতনের জন্য দায়ী করা যায় না। শিক্ষিত-নিরক্ষর, ধনী-দরিদ্র, সবল-দুর্বল, বেকার-কর্মে নিয়োজিত মানুষ নারী ও শিশু নির্যাতনের সঙ্গে জড়িত হচ্ছে। মূলত নারী ও শিশুদের প্রতি প্রচলিত সামাজিক নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সহিংসতা বাড়ছে।”
বয়স্ক নারীদের নিরাপত্তা ও ভরণ-পোষণ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “বয়স্ক নারীরা ভরণ-পোষণ এবং যথাযথ যত্নের অভাবে মানবেতর জীবন যাপন করছে। সন্তানরা তাদের ওপর ন্যাস্ত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না।”
এ সময় তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী তনু’র মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলেন। তনুর মা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, “দীর্ঘ আট মাস হয়ে গেল এখনও আমার মেয়ের হত্যাকারীদের চিহ্নিত করতে পারেনি প্রশাসন।”
তিনি এ সময় মেয়ে হত্যার দ্রুত বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজা পারভিন বিদ্যমান আইনের যথাযথ প্রয়োগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সম্প্রতি মন্ত্রিসভার বিশেষ বিধান সম্বলিত (১৮ বছরের নিচে বিয়ে দেয়ার সুযোগ রেখে) বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন অনুমোদন করায় এ সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে নারী ও শিশু নির্যাতন বন্ধে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। তা হলো- নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কার্যক্রমকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সরকারকে এ খাতে প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করা এবং মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা, আইনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তদন্ত কর্মকর্তা, বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও আইনজীবীদের কারিগরি দক্ষতা উন্নয়ন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ ও সচেতনতা কার্যক্রমে পুরুষদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, আইনে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মামলাসমূহ নিষ্পত্তি করা এবং অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা, পরিবার থেকে শুরু করে কমিউনিটি ও জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ফিরোজা পারভিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সমিতির পরিচালক-লিগ্যাল অ্যাডভোকেট তৌহিদা খন্দকার, প্রকল্প ব্যবস্থাপক অ্যাডভোকেট মিতালী জাহান, প্রজেক্ট কো অর্ডিনেটর আবু হানিফ, অ্যাডভোকেট ফিরোজা সরকারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।